মো: আবদুস সালিম: থেরেসা করবিন। একজন নামকরা মার্কিন লেখিকা। বসবাস করেন লুসিয়ানার নিউ অরলিন্সে। থেরেসা অ্যাকিলা স্টাইল ডটকমের সহযোগিতা ও ইসলাম উইচ ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা। এমনকি অন ইসলাম ডটকম নিয়েও কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘এখন আমি একজন মুসলিম নারী, কিন্তু আগে ছিলাম ক্যাথলিক। আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি ২০০১ সালের নভেম্বর মাসে। ওই সময় বসবাস করতাম লুসিয়ানায়। তবে তখন খুব খারাপ সময় ছিল ক্যাথলিক থেকে ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রে। তিনি বলেন, ‘আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি অন্ধকারে থাকা একশ্রেণীর মানুষকে আলোর পথে নিয়ে আসার জন্য। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার আগে কয়েক বছর এই ধর্ম নিয়ে গবেষণা করি। তারপর এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয় বুঝতে পারি।’ তার বাবা-মা আইরিশ। তিনি ছিলেন ক্রেওল ক্যাথলিক। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, থেরেসা করবিন হয়তো ইসলামের এমন সব সুন্দর বিষয় জানতে পেরেছেন, যে কারণে তিনি কনভার্সন বা ধর্মান্তরিত হন।
একসময় তিনি হোস্টেলে থাকতেন। তখন তার বয়স প্রায় ১৫ বছর। ওই সময়েও তিনি ইসলাম নিয়ে বিভিন্ন ধরনের চিন্তাভাবনা করতেন এবং বলতেন, ‘আমার মনে প্রশ্ন দেখা দেয় ক্যাথলিক ধর্মীয় বিশ্বাসের ব্যাপারে।’ এসব বিষয়ে তার শিক্ষক, যাজক শ্রেণীর মানুষকে প্রশ্ন করা হলে শুধুই বলা হতো, এসব বিষয় জানতে পারবে আরো বড় হলে। অর্থাৎ ওসব নিয়ে চিন্তা না করাই ভালো। থেরেসা করবিন মোটেই সন্তুষ্ট হতে পারতেন না এসব কথায়। তিনি বলতেন, ইসলাম সম্বন্ধে প্রকৃত বিষয়গুলো আমাকে জানতেই হবে। প্রয়োজনে ইসলামি চিন্তাবিদদের কাছে যেতে হবে। তার মনে ধর্মের প্রকৃতি, মহাবিশ্ব, মানুষ প্রভৃতি বিষয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিতে থাকে শৈশব থেকেই। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে চিন্তাশক্তির পরিধি বাড়তে থাকে। সত্যকে খুঁজে পাওয়া যেতে থাকে এ সংক্রান্ত ইতিহাস, অলঙ্করণ, বিভিন্ন মতবাদ ইত্যাদির যথাযথ বিশ্লেষণের মাধ্যমে।
সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণের পর তিনি বলেন, ‘ইসলামই রীতিমতো বিশ্বধর্ম। এর নানা দিক মানুষকে ন্যায় বা সঠিক বিচার, বিনয়ী, ধৈর্যধারণ, সহনশীলতা প্রভৃতির ব্যাপারে ভালোভাবে উৎসাহিত করে।’ তিনি এটি দেখেও অবাক হন যে, তার এ সংক্রান্ত কাজ দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হন। এটাও বুঝতে পারেন, ইসলাম তার অনুসারীদের শেখায় বা শিক্ষা দেয়। তার কাছে এসব সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। সব নবীর সম্মান বা ইজ্জত দেয়ার শিক্ষা দেয় শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলাম। আর শিক্ষা দেয়া হয়েছে এক আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তার উপাসনা করতে। মহৎ লোকেরা মানুষের সাথে ভালো আচরণ করতেন মহৎ বা ভালো উদ্দেশ্যে। প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য জ্ঞানার্জন বাধ্যতামূলক, এমনকি এটি ফরজও।
থেরেসা করবিন বলেন, ‘মুসলিম ও মুসলিম চিন্তাবিদদের মাধ্যমে উৎপত্তি হয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবাদের, যা মনে হলে বিস্ময়ে অবিভূত হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। তবে ২০০১ সালের ৯/১১ আমার এ সংক্রান্ত কাজকর্মকে সাময়িকভাবে পিছিয়ে দিয়েছিল। আমি আতঙ্কিত হই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িতদের কাণ্ড কারখানা দেখে। তবে এই পিছুটান বেশি দিন স্থায়ী হতে দেইনি। যারা ইসলামের ক্ষতি করতে চেয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কাজ করেছি। এসব কারণে আমাকে জিম্মি হতে হয়েছে অনিষ্টকারীদের হাতে। আমার সব ভয় বা পিছুটানকে জয় করতে পেরেছি ইসলামকে রক্ষার ক্ষেত্রে। আমার ভাইবোনদের সেই মানসিকতায় বা চিন্তাধারায় নিয়ে যেতে চেয়েছি।
থেরেসা করবিন মুসলিম নারীদের হিজাব, স্কার্ফ পরার কারণ জানতে চান। তখন তাকে বলা হয়, হিজাব পরিধান করলে আল্লাহ খুশি হন, পর্যাপ্ত সম্মানও পাওয়া যায়। এগুলো পুরুষের হয়রানি, কুদৃষ্টি ইত্যাদি থেকে নারীদের মুক্ত রাখে। এমনও বলা হয়েছে, ইসলাম আমাদের নারীবাদী আদর্শের সাথে মিল খেয়েছে আশ্চর্যজনকভাবেই।
তিনি মনে করেন (ব্যাখ্যাও করেন), শালীন বা মার্জিত পোশাক শান্তির প্রতীক। গণমাধ্যমে থেরেসা করবিনের এ সংক্রান্ত একটি নিবন্ধও ছাপা হয়েছে। এটি বেশ গুরুত্বও পেয়েছে সারা বিশ্বে।