প্রচ্ছদ ভ্রমণ ইয়র্কশায়ার ডেলসে আমাদের দু’দিনব্যাপী প্রীতিউৎসব—

ইয়র্কশায়ার ডেলসে আমাদের দু’দিনব্যাপী প্রীতিউৎসব—

0
সরওয়ার-ই আলম: প্রগাঢ় সবুজে ঘেরা রাউণ্ডহে পার্কের এ জায়গাটিকে শেষ বিকেলের আলোয় মনে হচ্ছিল যেন এক টুকরো ভূস্বর্গ! চারদিকে বৃষ্টি বিধৌত তরতাজা মিহিন সবুজ। অনতিদূরের জল টইটুম্বুর লেক থেকে থেমে থেমে ভেসে আসছিল কলকল শব্দ। সদ্য ফোটা ম্যাগনোলিয়া, চেরি ব্লসম, ডেইজি ও নাম না জানা মৌসুমী ফুলেরা কেমন মায়াবী করে তুলেছিল চারপাশের প্রকৃতিকে। তার মাঝে শতাব্দী প্রাচীন একটি স্থাপত্যে জমে উঠলো সাহিত্য ও সংস্কৃতিকর্মীদের দু’দিনব্যাপী প্রীতিউৎসব। জমে উঠলো এক অনন্য সাধারণ প্রাণের মেলা।

বিকেল চারটা নাগাদ ব্রিটেনের বিভিন্ন শহর থেকে একে একে এসে যুক্ত হলেন আগ্রহী সাহিত্য ও সংস্কৃতিকর্মীবৃন্দ। ব্রিটেনভিত্তিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সৌধ ও রাধারমণ সোসাইটিকে কেন্দ্র করে মূলত বছরব্যাপী আবর্তিত হতে থাকে আমাদের কর্মচাঞ্চল্য। বার্মিংহাম থেকে এসে হাজির হলেন সাপ্তাহিক বিচিত্রা ও বিবিসিখ্যাত সাংবাদিক জাওয়াদ ভাই।সঙ্গে ছিলেন কান্তা ভাবী। পতি স্বপন দাসহ লণ্ডন থেকে এসে যুক্ত হলেন স্বনামধন্য কণ্ঠশিল্পী ও সংগীত শিক্ষাগুরু গৌরী দি। এলেন স্বনামধন্য কণ্ঠশিল্পি ও সংগীত শিক্ষাগুরু সঞ্জয় দা। এনফিল্ড থেকে এলেন রাধারমণ সোসাইটির অন্যমত সংগঠক সুজিত দা। দুই পুত্র সাহিল ও রাইদকে নিয়ে কার্ডিফ থেকে এসে যুক্ত হলেন পাবলিক হেলথের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জেসমিন আপা। লিডস থেকে যুক্ত হলেন রাধারমণ সোসাইটির আরেকজন শীর্ষ সংগঠক অমর দা, সংস্কৃতিনুরাগী অশোক দা, সংগীতশিল্পী অভ্র দা। ইলফোর্ড থেকে এলেন সংস্কৃতিনুরাগী তৌহিদ ভাই, লিজা ভাবী ও তাদের দুই কন্যা- তানিশা ও আরিশা । সানিয়া, সাহির ও ছোট্ট সামিরকে নিয়ে হাজির হলাম আমিও। আর আমাদের সবাইকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন সৌধ ও রাধারমণ সোসাইটির প্রধান সংগঠক কবি কায়সার ভাই।
এ এক অনন্য সাধারণ আয়োজন। আমাদের অনুরোধে একদিকে একের পর এক গান পরিবেশন করছিলেন গৌরী দি, সঞ্জয় দা ও অভ্র দা, অন্যদিকে সবুজ ঘাসের বিশাল মাঠে মনের আনন্দের খেলা করছিল সাহিল, রাইদ,সানিয়া, আনিশা, তানিশা ও সামির। পুরো আয়োজনটি ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করছিলেন কায়সার ভাই। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন সংস্কৃতিনুরাগী বন্ধুগণ।
গল্পকথা, সংগীত আর কবিতায় কখন যে কেটে গেল কয়েকঘণ্টা আমরা টেরই পাইনি। এরপর শুরু হলো বারবিকিউয়ের আয়োজন। অমর দা, তৌহিদ ভাই দু’জনে মিলে সামলালেন বারবিকিউয়ের পুরো আয়োজনটি। জাসমিন আপা সালাদ বানালেন। লিজা ভাবী চানাচুর মেখে পরিবেশন করলেন সবার মাঝে। বারবিকিউ শেষে ধামাইল নৃত্যের মধ্য দিয়ে শেষ হলো প্রথম দিনের আয়োজন। আমরা যে যার মত হোটেলে ফিরে গেলাম দ্বিতীয় দিনের আয়োজনের জন্য শক্তি সঞ্চয় করতে।
দ্বিতীয় দিন ছিল ট্রাউট ফার্মে মৎস্য শিকার ও বোল্টন অ্যাবির হোয়ার্ফ নদীর পাড়ে বারবিকিউ করে মধ্যাহ্ন ভোজনের আয়োজন। সবাই দল বেঁধে হাজির হয়ে গেলাম কিলিনসে ট্রাউট ফার্মে। বেলা তিনটা নাগাদ মাছ ধরা শেষ। আহা মৎস্য শিকারে আমাদের বাচ্চাদের সেকি আনন্দ! সানিয়া, সাহিরের জন্য জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা। তৌহিদ চাচ্চু তাদেরকে শিখিয়ে দিচ্ছিলেন মাছ ধরার কৌশল। সর্বসাকুল্যে তারা মোট বারোটা মাছ ধরতে সমর্থ হলো।
ট্রাউট ফার্ম থেকে বোল্টন আ্যবি হয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম বার্নসাল ভিলেজের হোয়ার্ফ নদীর পাড়ে। সেখানে গিয়ে মন ভরে গেল। আরেকটি ভূস্বর্গ যেন! পাহাড়ের পাদদেশে বিশাল পর্যটন এলাকা। নানা বর্ণের মানুষ। ঝকঝকে রৌদ্রজ্জল দিন। চারদিকে মনের আনন্দের ছোটাছুটি করছে শিশুরা। বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে তাদের কচিমুখের আনন্দধ্বনি, নরম ঘাসে তাদের পদস্পন্দন। স্বচ্ছ নদীর পানির তীব্র আকর্ষণে অনেকেই নেমে পড়েছেন গা ভেজাতে। আমাদের শিশুদের কেউ কেউ আনন্দ করছিল একে অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে। যথারীতি সদ্যধরা তাজা ট্রাউট মাছ বারবিকিউ করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন অমর দা, তৌহিদ ভাই, সুজিত দা, অভ্র দা, দীপালি বৌদি ও আরো কয়েকজন বন্ধু। একদিকে বারবিকিউ চলছে অন্যদিকে নানারকম খুনসুটি, গল্পকথায় হাস্যরসে আনন্দ উল্লাস করছি আমরা! গৌরী দি হেঁটে হেঁটে তাঁর আই প্যাডে ধারণ করছিলেন মহাআনন্দের স্মৃতিগুলো। বারবিকিউ শেষ হলে প্লেটে সাজিয়ে আমাদের মাঝে বিলম্বিত মধ্যাহ্নভোজ পরিবেশন করলেন জাসমিন আপা, লিজা ভাবী, দীপালি দি ও অন্যরা। খাওয়া শেষে দলবদ্ধ হয়ে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে অনবদ্য এই স্মৃতিটাকে ক্যামেরাবন্দী করা হলো, জীবনের শ্রেষ্ঠতম কিছু আনন্দ-অনুভূতি নিয়ে যে যার গন্তব্যে ফিরে গেলাম আমরা। ২৯ ও ৩০ মে— দু’দিনের এই প্রীতিউৎসব মধুর স্মৃতি হয়ে থাকবে আমাদের জীবনে অনেকদিন!
পূর্ববর্তী নিবন্ধচল্লিশেও রূপবতী থেকে নজর কাড়ুন!
পরবর্তী নিবন্ধদাম্পত্য জীবনের ইতি টানলেন আমির খান এবং কিরণ রাও