গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ অব্যাহত থাকলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিও অব্যাহত থাকবে

বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব গত বছর রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

সোমবার (২৫ অক্টোবর) জাতিসংঘের ২৬তম জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে (কপ২৬) এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এ সময় বৈশ্বিক উষ্ণতা (গ্লোবাল ওয়ার্মিং) আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে বলে সতর্কবার্তা জানানো হয়েছে।

জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) জানিয়েছে, ক্রমবর্ধমান গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ফলে আবহাওয়া আরও ভয়াবহ রূপ গ্রহণ করবে যার প্রভাব পরিবেশ, অর্থনীতি এবং মানব জীবনের ওপর ব্যাপকভাবে পড়বে।

ডব্লিউএমও জানিয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা গ্রিন হাউস গ্যাসের নিঃসরণে সাময়িকভাবে কমিয়েছিল, কিন্তু গ্রিনহাউস গ্যাসে বায়ুমণ্ডলীয় মাত্রা এবং বৃদ্ধির হারের ওপর এর কোনো প্রভাব পড়েনি।

সংস্থার গ্রীনহাউস গ্যাস বুলেটিনের তথ্যানুযায়ী, গত বছর বৃদ্ধির বার্ষিক হার ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল এবং এই হার ২০২১ সালেও অব্যাহত রয়েছে।

ডব্লিউএমও-এর তথ্যানুযায়ী, যতক্ষণ গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ অব্যাহত থাকলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিও অব্যাহত থাকবে।

এমনকি গ্যাসের নির্গমন শূন্য হয়ে গেলেও, বর্তমানে যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়েছে তা তাপমাত্রার স্তরে আগামী কয়েক দশক ধরে অব্যাহত থাকবে।

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে ৩১ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (কপ২৬) অনুষ্ঠিত হবে।

ডব্লিউএমও প্রধান পেটেরি তালাস বলেন, “গ্রীনহাউস গ্যাস বুলেটিনে কপ২৬-এর জলবায়ু পরিবর্তন আলোচকদের জন্য একটি বৈজ্ঞানিক বার্তা রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “গ্রীনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব বৃদ্ধির বর্তমান হার অনুযায়ী আমরা এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেখতে পাবো। যা প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস প্রাক-শিল্প স্তরের উপরে থাকবে।”

তালাস বলেন, “যদি পৃথিবী একইভাবে জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহার করতে থাকে তবে ২১০০ সালের মধ্যে পৃথিবীতে প্রায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। তবে প্রশমন প্রচেষ্টার মাধ্যমে উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করা এখনও সম্ভব।”

ডব্লিউএমও আরও জানিয়েছে, ক্রমবর্ধমান গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের কারণে পৃথিবীর আবহাওয়া আরও বিরূপ আকার ধারণ করতে পারে।

এর মধ্যে তীব্র তাপদাহ, বৃষ্টিপাত, বরফ গলে যাওয়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং সমুদ্রের পানি অম্লকরণ ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেবে। যা বিশ্বের মানুষের উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।

আমাদের প্রতিশ্রুতিকে কাজে রূপান্তর করতে হবে উল্লেখ করে তালাস আরও বলেন, “আমাদের শিল্প, শক্তি এবং পরিবহন ব্যবস্থা এবং পুরো জীবনযাত্রাকেই পুনর্বিবেচনা করতে হবে। প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত হতে হবে। আমাদের হাতে নষ্ট করার মতো সময় নেই।”

ডব্লিউএমও উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, আমাজন রেইনফরেস্টের দক্ষিণ-পূর্ব অংশ এখন কার্বন নির্গমনের উৎস হয়ে উঠেছে।

ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের গ্রিনহাউস গ্যাস গ্রুপের ইউয়ান নিসবেট, গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাপকে “গাড়ি দুর্ঘটনায় ছিটকে পড়ার” সঙ্গে তুলনা করেছেন।

তিনি বলেন, “দুর্যোগ ঘনিয়ে আসছে এবং আপনি তা আটকাতে পারছেন না। আপনি সামনে দুর্ঘটনা দেখতে পাচ্ছেন এবং এই মুহূর্তে আপনি শুধুমাত্র চিৎকার করতে পারেন।”

রেকর্ড পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড বৃদ্ধি

তিনটি প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাস হল কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইড। এদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কার্বন ডাইঅক্সাইড, যা জলবায়ুতে উষ্ণায়নের ৬৬%-ই কার্বন ডাইঅক্সাইডের কারণে হচ্ছে।

ডব্লিউএমও জানিয়েছে, ২০২০ সালে কার্বন ডাইঅক্সাইড প্রতি মিলিয়নে (পার্টস পার মিটার বা পিপিএম) ৪১৩.২-তে পৌঁছেছে। যা ১৭৫০ সালে প্রাক-শিল্প স্তরের প্রায় ১৪৯% বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানুষের ক্রিয়াকলাপ দ্বারা নির্গত কার্বন ডাইঅক্সাইডের প্রায় অর্ধেক বায়ুমণ্ডলে থাকে, বাকি অর্ধেক মহাসাগর এবং ভূমিতে শেষ হয়।

তালাস বলেন, “শেষবার যখন পৃথিবীতে কার্বন ডাইঅক্সাইডের রেকর্ড পরিমাণ ঘনত্ব বেড়েছিল তা ছিল ৩০ থেকে ৫০ লাখ বছর আগের ঘটনা। তবে তখন পৃথিবীতে ৭৮০ কোটি মানুষ ছিল না।”

অন্যদিকে, ২০২০ সালে মিথেন গ্যাসের পরিমান প্রতি বিলিয়নে (পার্টস পার বিলিয়ন বা পিপিবি) নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। আগের বছরের তুলনায় ১১পিপিবি বেড়েছে যা প্রাক-শিল্প আমলের তুলনায় ২৬২% বেশি।