প্রচ্ছদ প্রবন্ধ পহেলা বৈশাখ এখন একটা স্মৃতির নাম।

পহেলা বৈশাখ এখন একটা স্মৃতির নাম।

0
খায়রুন নাহার চৌধুরী: রাত পোহালেই পহেলা বৈশাখ । বাঙালিদের প্রাণের উৎসবের নাম “পহেলা বৈশাখ “। এটি সার্বজনীন, সকল ধর্মের সকল বর্ণের উৎসব । এই দিনের ঐতিহ্যবাহী বর্ণাঢ্য আয়োজনে মুগ্ধ হয়েছে বিশ্ববাসী। রমনা বটমূলে গান শুনা আর মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়াটা অন্য রকম এক অনুভূতি । ইদানিং বিভিন্ন পার্ক আর মাঠেও নববর্ষের আয়োজন হচ্ছিল । মার্কেটগুলোতে উপচে পড়া ভিড় থাকতো। পহেলা বৈশাখের আগের দুই দিন তো রাস্তায় বের হওয়া আর ফিরে আসা ছিল এক যুদ্ধ জয়। মানুষের সে কি উৎসাহ বছরের প্রথম প্রহরকে বরণ করে নেয়ার জন্য । হালখাতার দাওয়াত এক সপ্তাহ আগে থেকেই শুরু হয়ে যেতো। অনেকে ফুল মিষ্টি বাসায় পাঠাতেন। রেশমী চুড়ি, দেশী সুতির শাড়ি, মাটির গয়না, চুলে প্রিয় জনের দেয়া ফুল গুঁজে সাত সকালে বেরিয়ে পড়া ছিল বাঙ্গালী রমণীর বৈশাখের আনন্দ । বৈশাখি মেলাগুলোতে ঘুরে ঘুরে গ্রামীন হস্তশিল্পীদের বানানো কতো কিছু যে কিনা হতো তার ইয়ত্তা নেই। পান্তা ইলিশ খাওয়া, উপহার দেয়া নেয়া,শুভেচ্ছা বিনিময় করা,নানান ঢঙে ছবি তুলা,মোটামুটি হৈহুল্লুড় করে এই দিনটি সবাই উৎযাপন করতেন।
আজ পহেলা বৈশাখ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ ।
নববর্ষের দিনেও আজ আমাদের মুখে হাসি নেই। পহেলা বৈশাখ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই। আর দশটা দিনের মতোই সকাল হবে। আরো একটা দুঃচিন্তার দিন শুরু হবে। বছরের প্রথম সূর্য হয়তো অবাক হয়ে পৃথিবীকে বলবে,আজ পৃথিবীর মানুষগুলো খুব অসহায়। তোমার বাংলাদেশকে দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে হে পৃথিবী , নববর্ষের কোনো আয়োজন নেই, এতো হাহাকার!”এমন তো হবার কথা ছিল না। একি হলো আজ! কতো বেশী অপরাধ করলে এতোটা শাস্তি পেতে হয়?
আমাদের পহেলা বৈশাখগুলো ভীষণ আনন্দের ছিল। আমি আমার মেয়ে আর তার বাবা মিলে খাবারের মেনু তৈরী করতাম । কতো রকমের ভর্তা করবো ,কাকে কাকে খেতে ডাকবো তার দীর্ঘ লিস্ট বানাতাম। দেশীয় তাঁতের শাড়ি, রেশমী চুড়ি, মাটি আর রূপার গয়না আমাদের খুব প্রিয় । মা মেয়ে সাজুগুজু করে বেরিয়ে পড়তাম ।এবার নিয়ে চারটি বছর মেয়ে কাছে নেই।তবুও দুই জন দুই মহাদেশে আমাদের উৎসবগুলো পালন করেছি। আমার মেয়ের পান্তা খুব পছন্দ । সেখানে শীতের দেশে ঠান্ডা পানির বদলে গরম পানিতে পান্তা করতে হতো, নইলে পান্তার বদলে” আইচ রাইস” হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

এবার আমার মেয়েটা সম্পূর্ণ একা। নিশ্চয়ই জানলার কাঁচে চোখ রেখে দেখবে ,অন্য বাড়ির ছেলেমেয়েরা বাবা মার সাথে সময় কাটাচ্ছে। সুখে দুখে মা বাবা সাথে আছে।আর আমার মেয়েটা এই মহা দুঃসময়ে বাবা মা কাউকে কাছে পাচ্ছে না। প্রতিটি মূহুর্ত অজানা ভয়ে পার করছে। মাঝে মাঝে বলে,” কিচ্ছু ভালো লাগছে না মা, কোনো কিছুতে মন বসছে না। তোমাদের মিস করি, COVID-19 যে দিন বিদায় নিবে, যে দিন পৃথিবীর মানুষ মুক্তি পাবে,যে দিন আর একজনকেও নিঃশ্বাস নিতে ছটফট করতে হবে না, যে দিন সব এয়ারপোর্টগুলো তাদের ফ্লাইট চালু করে দিবে পুরোদমে , আমি প্রথম ফ্লাইটেই চলে আসবো । তোমরা নিজেদের খেয়াল রেখো, বাপিকে সাবধানে থাকতে বলো।
আমি মনে মনে বলি,তোমার বাবা সুস্থ থাকবেন,তোমার মা,নানু তোমার সব প্রিয়জন সুস্থ থাকবেন। আমাদের পৃথিবীও মুক্তি পাবে এই অভিশাপ থেকে।আমরা সবাই ভালো থাকবো,আমাদের আবার দেখা হবে মহামারীর পরে।
আমরা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাদঁবো। আনন্দে কাদঁবো, দুঃখে কাদঁবো, সুখে কাদঁবো, প্রিয়জন হারানোর ব্যাথায় কাদঁবো । আবার যখন সব আগের মত হবে,আমরা আবার এক রকমের শাড়ি পরবো,লাল রেশমী চুড়ি পরবো,তোমার পায়ে আলতা পরিয়ে দিবো,তুমি এখনও ঠিক মতো কাজল পরতে শিখোনি, এবার শিখে নিও। আবার যেদিন আমাদের দেখা হবে,তোমাকে নিয়ে রিক্সা করে ঘুরবো, বৃষ্টিতে ভিজবো।
“তোমাদের এবার নিউমোনিয়ায় হবে ,এই আমি বলে রাখলাম ” চিৎকার দিয়ে বলে বলে তোমার বাবা গলা বসাবে। আমরা কারো কথায় কান দিবো না। মুক্ত পাখীর মতো ভেসে বেড়াবো।
ছবি:গুগল।
আহা!দেখা হতে আর কতোদিন বাকী?
আজ প্রচন্ড একটা কাল বৈশাখী ঝড় চাই,যেনো সব দুঃখ, কষ্ট, রোগ,মহামারী, লোভ,হিংসা, ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয়। নতুন পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ যেনো খুব মানবিক হয়। মানুষকে ভালোবাসা আর জীবকে দয়া করা যেনো আমাদের ধর্ম আর কর্ম হয়।