প্রচ্ছদ ধর্ম বঞ্চিতদের মুখে হাসি ফোটানো বড় ইবাদত

বঞ্চিতদের মুখে হাসি ফোটানো বড় ইবাদত

0
রায়হান রাশেদ : হাসি-কান্নায় জড়ানো মানুষের জীবন। মানুষ হাসি-কান্নায় বেড়ে ওঠে। বেঁচে থাকে। সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশু কাঁদে হাসে। কারণে কিংবা অকারণে। সর্বোপরি জগতের সবাই হাসে আবার কাঁদে। অথবা কাঁদে পরে হাসে। জগৎটা যেন হাসি-কান্নার মঞ্চ। সবার হাসি-কান্নার কারণ-অকারণ ব্যতিক্রমধর্মী। কেউ হাসে স্বউচ্চে, কেউ মুচকি। কেউ রোদন করে দুঃখে, যন্ত্রণায় কিংবা খোদার ভয়ে। ধর্ম বলে হাসি হোক মুচকি ও পরিমিত। চোখযুগল ভিজে উঠুক খোদার ভয়ে।
অনর্থক হাসার মধ্যে কোনো ফল নেই। প্রাপ্তি সফলতা নেই। আছে বিদ্রূপ প্রহসন ও জাহান্নামে প্রবেশের লক্ষণ। ক্রন্দনে রয়েছে সফলতা, রাব্বে কারিমের রেজামন্দি ও মানবপ্রেম পাওয়ার উপকরণ।

আল্লাহর ইচ্ছা হল মানুষ হাসুক কম। হাসি হোক পরিমিত এবং হাসি হোক মুচকি। অনেক হাসলে অন্তর মরে যায়। দুনিয়ার বুকে অনর্থক জোরে জোরে হাসার কারণ আখেরাতে পরিণাম ভয়াবহ হবে। আখেরাতে ব্যক্তিকে কাঁদতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘অতএব, তারা সামন্য হেসে নিক এবং তারা তাদের কৃতকর্মের বদৌলতে অনেক বেশি কাঁদবে’। সূরা তওবা ৮২।

উল্লিখিত আয়াতে ‘ফালইয়াদহাকু কালিলা’ এর শাব্দিক অর্থ হল ‘হাসো কম কাঁদো বেশি’। এ আয়াতের তাফসিরে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘দুনিয়া সামান্য কয়েকদিনের আবাসস্থল। এতে যত ইচ্ছা হেসে নাও। তারপর দুনিয়ার জীবন শেষ হয়ে যাবে এবং আল্লাহর সানিধ্যে উপস্থিত হবে তখনই কান্নার পালা শুরু হবে যা আর শেষ হবে না’। তাফসিরে মাযহারি।

আল্লাহর অনুমতিক্রমে রাসূল (সা.) কে জিবরাইল (আ.) জানা-অজানা গোপন রহস্যের অনেক বিষয়ের সংবাদ দিয়েছেন। তাঁকে দুনিয়ার জীবনে জান্নাত-জাহান্নাম দেখানো হয়েছে। তাঁর জানার পরিধি পৃথিবীর সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। তাঁর জন্যই জান্নাতের সৃষ্টি। তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব। তিনি কম হাসতেন, বেশি কাঁদতেন। মানুষকে কম হাসতে ও বেশি করে কাঁদতে উপদেশ দিতেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তবে তোমরা খুব কমই হাসতে এবং খুব বেশি কাঁদতে’। বোখারি ৬৪৮৫, তিরমিজি ২৩১৩।

ক্রন্দন দিলকে নরম করে। অন্তরে প্রশান্তি আনে। দুঃখকে হালকা করে। মানুষের মন কান্নাকারীর প্রতি খুব সহজে নরম হয়। আল্লাহর ভয়ে কান্নাকারীকে তিনি ভালোবাসেন।

অনর্থক কথা বলা ইসলামে নিষিদ্ধ। মানুষকে হাসানোর বাসনায় কথা বলা পাপের কারণ। হাসানোর জন্য বেহুদা অর্থহীন কথা বললে জাহান্নামে জ্বলতে হয়।

মানুষ সব কথাবার্তায় হাসে না। মজা রস প্রহসন ও কৌতুকের কথা হল হাসির উপকরণ। সত্য কথায় হাসির রসদ কম থাকে। মিথ্যা বললে হাসির হিড়িক পড়ে যায়। হাসির রঙ্গমঞ্চ সাজানো যায় মিথ্যা বলে। অথচ হাসানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যা বলা গোনাহের কাজ। ধ্বংসের কারণ। বাহ্য ইবনে হাকীম (রহ.) বর্ণনা করেছেন তার দাদা বলেন, আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি, ‘সেই লোক ধ্বংস হোক যে মানুষদের হাসানোর উদ্দেশ্যে কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা বলে। সে নিপাত যাক। সে নিপাত যাক’। তিরমিজি ২৩১৫।

আমাদের হাসি হোক মানব উপকারে। নিজের মুখের হাসিবঞ্চিতদের জন্য উসর্গ করাই সবচেয়ে বড় ইবাদত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here