দীর্ঘ ১৯ মাস পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় বিএনপির জনসভা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে।
ইতিমধ্যে ঢাকাসহ রাজধানীর আশপাশের জেলা ও মহানগর বিশেষ করে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইলের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলের আশপাশে অবস্থান নিয়েছেন।
তবে জনসভায় অংশ নিতে এসে তারা পথে পথে নানা হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতার ও বাসাবাড়িতে তল্লাশির নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করছেন দলটির নেতারা। দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা এসব কথা বলেন।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, আমরা খবর পেয়েছি, সরকার বিভিন্ন জায়গা থেকে গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। আজকে রাস্তাঘাটে যানবাহন নেই বললেই চলে। গ্রেফতার আতঙ্কে রেখেছে নেতাকর্মীকে। এটিই সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণ।
তারা সমাবেশের অনুমতি দিলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল জায়গা ব্যবহার করতে দেয়নি। এসব করে সরকার জনতার ঢলকে থামাতে পারবে না। দুপুরের পরেই সমাবেশস্থলের সর্বত্র জনসমুদ্রে পরিণত হবে।
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ শনিবার সকালে ২৩ শর্তে বিএনপিকে এ জনসভার অনুমতি দিয়েছে। অনুমতি পাওয়ার পর ৩০ ফুট প্রস্থ ও ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের মঞ্চ বানানো সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান।
এ মঞ্চে দাঁড়িয়েই গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
জনসভা থেকে খালেদা জিয়া নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের প্রতি রাজনৈতিক সমঝোতার ডাক দিতে পারেন বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।
একই সঙ্গে তিনি আগামী দিনের আন্দোলনে নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থেকে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার আহ্বান জানাবেন।
দুপুর ২টা থেকে শুরু করে বিকাল ৫টার মধ্যে সমাবেশ শেষ হবে। তবে সমাবেশ থেকে উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না। লাঠিসোটা, ব্যানার, ফেস্টুন বহনের আড়ালে লাঠি, রড ব্যবহার করা যাবে না। মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসা যাবে না। অনুমোদিত স্থানের বাইরে সাউন্ড বক্স ব্যবহার নিষিদ্ধসহ ২৩ শর্তে বিএনপিকে আজকের জনসভার অনুমতি দেয়া হয়।
সর্বশেষ, ২০১৬ সালের ১ মে শ্রমিক দিবস উপলক্ষে শ্রমিক সমাবেশ করে বিএনপি। এর আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল। এর আগে ওই বছরের ৫ জানুয়ারি নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার সুযোগ পায় দলটি।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের দুই বছর পূর্তিতে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে সেই সমাবেশ করে বিএনপি। জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল এর আয়োজন করে।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকলে প্রয়োজনে পায়ে হেঁটে নারায়ণগঞ্জ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাব। আমার সঙ্গে ১০ হাজার নেতাকর্মী যাবেন।
তিনি অভিযোগ করেন, সমাবেশে যাতে যোগ দিতে না পারে এ জন্য নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শনিবার দিনগত রাতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকেও গ্রেফতারের জন্য পুলিশ অভিযান চালায় বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তৈমূর বলেন, এসব করে সরকার পার পাবে না। আমাদের নেতাকর্মীদের অনেকে আগে থেকেই ঢাকায় অবস্থান করছেন। তাই কোনো প্রতিবন্ধকতাই আমাদের রুখতে পারবে না।
যুগান্তর রিপোর্ট