রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রাম এখনও জ্বলছে। শুক্রবার বিকালে ধারণ করা ভিডিও ও স্যাটেলাইন ছবিতে এর প্রমাণ মিলেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ কথা জানিয়েছে। তারা শুক্রবার এ সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের গ্রামগুলো থেকে ধোঁয়া উঠছে। রাখাইনে অ্যামনেস্টির সূত্রগুলোর দাবি, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও তাদের দোসররা এসব অগ্নিসংযোগ করেছে।
১৯ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রথম ভাষণে দাবি করেন, ৫ সেপ্টেম্বর থেকে রাখাইনে সেনা অভিযান বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এসেছে। অ্যামনেস্টি বলেছে, কিন্তু তার দাবি যে ভুল, তার অকাট্য প্রমাণ তাদের স্যাটেলাইটে ধারণ করা ভিডিও ও ছবি। জাতিগত নিধন বন্ধের দাবিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। তারা তাদের সর্বশেষ রিপোর্টে বলেছে, যে গ্রামগুলো তারা জ্বলতে দেখেছে তার মধ্যে একটি এরই মধ্যে একেবারে শেষ হয়ে গেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ক্রাইসিস রেসপন্স বিষয়ক পরিচালক তিরানা হাসান বলেছেন, অং সান সুচি বিশ্ববাসীর কাছে যে দাবি করেছেন তা মিথ্যা। এর প্রমাণ আমাদের হাতে আছে। তিনি দাবি করেছিলেন ৫ সেপ্টেম্বর থেকে রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশনস’ বন্ধ রয়েছে। তিরানা হাসান আরও বলেন, এরই মধ্যে তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। কিন্তু রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা থামেনি। রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর, গ্রাম জ্বলছেই। তাদের শুধু বাড়িছাড়া করেই থামেনি মিয়ানমার বাহিনী, তারা যেন আর বাড়িতে ফিরে না যায়Ñ সে ব্যবস্থাও নিশ্চিত করছে তারা।
তিরানা হাসান বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আর সময় দেয়া যায় না। এখন সময় এসে গেছে। তারা যেন আর দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, এখনই সর্বসম্মতভাবে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এর নিন্দা জানাতে হবে। নিতে হবে কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ, যাতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এ অভিযান বন্ধ হয়। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যেসব ভিডিও ধারণ করেছে, তার মধ্যে একটি ধারণ করা হয়েছে ২১ সেপ্টেম্বর। এটি ধারণ করা হয়েছে মংডু শহরের উত্তরাঞ্চলে হপার ওয়াট চাউং গ্রামের কাছ থেকে। তাতে দেখা গেছে, একটি বসতির কাছে বিশাল একটি বাগানের ভেতর থেকে ধোঁয়া উঠছে।
স্থানীয় একজন অধিবাসী অ্যামনেস্টিকে বলেছেন, বিকালের দিকে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ ও স্থানীয় পাহারাদাররা এসব অগ্নিসংযোগ করেছে। একই সন্ধ্যায় আরও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এছাড়া ১৬ ও ২২ সেপ্টেম্বর ভিডিও ধারণ করেছে অ্যামনেস্টি। এতে এখনও ধোঁয়া উঠার প্রমাণ রয়েছে। বুথিডং এলাকায় নগা ইয়ান্ট চাউং গ্রামের বাইরে বিভিন্ন কোণ থেকে ধারণ করা হয়েছে এসব ভিডিও। শুক্রবার সন্ধ্যায়ও তাতে দেখা গেছে গ্রাম জ্বলছে। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, দুপুর দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একই রকম তথ্য প্রকাশ করে।
কৃতজ্ঞতায়: যুগান্তর