সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী সঙ্গীত মৈত্রী সংগঠন ‘ম’ আয়োজিত ‘ম’ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত সম্মেলনে সেতার পরিবেশন করেন সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খানের ছোট ভাই সুর সাধক ওস্তাদ আয়েত আলী খানের উত্তরসূরি আফসানা খান এবং সরোদ পরিবেশন করেন রুখসানা খান। লিখেছেন- রীতা ভৌমিক
ওস্তাদ আবেদ হোসেন খান বিছানায় শয্যাশায়ী। অসুস্থ অবস্থায় সাত বছরের নাতনি আফসানার হাতে সেতার তুলে দেন। কিন্তু নাতনিকে শেখানো তার আর হয়ে ওঠে না। দাদার কাছে সেতারে তালিম নিতে না পারলেও বাবা ওস্তাদ শাহদৎ হোসেন খানের কাছে সেতারে হাতেখড়ি তার।
এ প্রসঙ্গে সেতার বাদক আফসানা খান বলেন, রাত এগারোটার পর আব্বুর কাছে যমজ দু’বোন রেওয়াজ করতাম। রেওয়াজ করতে করতে রাত দেড়টা বেজে যেত। দিনের বেলা রেওয়াজ করার সময় পেতাম না। সকালে স্কুলে যেতাম। স্কুল থেকে ফিরে পড়তে বসতে হতো। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে রেওয়াজ করতাম।
সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খানের ছোট ভাই সুর সাধক ওস্তাদ আয়েত আলী খানের উত্তরসূরি আফসানা খান উত্তরাধিকার সূত্রে সেতার সাধনা করছেন। বংশপরম্পরায় আফসানা পঞ্চম প্রজন্ম। বাবা ওস্তাদ শাহদৎ হোসেন খান একজন দেশবরেণ্য সরোদ বাদক। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন একুশে পদক। মা রেবেকা খান রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ছিলেন। বংশগতভাবে শৈশবে সঙ্গীতময় পরিবেশেই তিনি বেড়ে ওঠেন।
দর্শকদের সামনে তিনি প্রথম তানপুরা পরিবেশন করেন তার বাবা ওস্তাদ শাহদৎ হোসেন খানের সঙ্গে চারুকলা ইন্সটিটিউটের একটি অনুষ্ঠানে। এরপর বাবার সঙ্গে প্রায় পনের বছর ধরে অনেক অনুষ্ঠানে সেতার পরিবেশন করেছেন। এরমধ্যে সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত চৈত্র সংক্রান্তির অনুষ্ঠানে সেতার বাজিয়ে তিনি সবচেয়ে আনন্দ পান।
এ প্রসঙ্গে আফসানা খান জানান, চৈত্র সংক্রান্তির অনুষ্ঠানে যারা আসেন সেসব শ্রোতারা সংস্কৃতিমনা। তারা আমার সেতার শুনে আনন্দ পান। তাই তার সেতার বাজাতেও আনন্দ লাগে। ঢাকার রামপুরায় তাদের নিজেদের সংগঠন ‘ওস্তাদ আয়েত আলী খান সঙ্গীত নিকেতন’ আয়োজিত অনুষ্ঠানেও অনেক বোদ্ধা শ্রোতারা আসেন। এপ্রিলে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয় দাদা ওস্তাদ আবেদ হোসেন খানের নামে। সেপ্টেম্বরের অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয় ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান ও তার ছোট ভাই ওস্তাদ আয়েত আলী খানের নামে।
দেশ ছাড়া দেশের বাইরেও আফসানা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সেতার বাজিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য জেনেভাতে অনুষ্ঠিত জেনেভার ইউ.এন ন্যাশনাল এসেম্বলি হলে ইউনাইটেড ন্যাশনস এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তার বাবা ওস্তাদ শাহদৎ হোসেন খান ও বোন রুখসানা খান সরোদ এবং তিনি সেতার পরিবেশন করেন। ইউরোপিয়ান শ্রোতারা তার বাজনা শুনে অনুপ্রাণিত হন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন জলসিঁড়ি পুরস্কার।
ঢাকার ইউনিভার্স টিউটোরিয়াল থেকে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু। ম্যাপেললিভ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে এ লেভেল, ইউনির্ভাসিটি অব লন্ডন থেকে আইন ডিগ্রি লাভ করেন। ইউনির্ভাসিটি অব সাউথ এশিয়া থেকে এমবিএ করেন।
সরোদ বাজানোর জন্য সুরটা গুরুত্বপূর্ণ : রুখসানা খান