সুধাময় সরকার: মূল পরিচিতিটা গণসংগীতে হলেও বাংলা পপ গানের অন্যতম মুখ ফকির আলমগীর। স্বাধীনতার পর যে ক’জন মানুষের হাত ধরে পপ সংগীতের উত্থান ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, সেই তালিকায় রয়েছে এই নামটিও। যেখানে আরও ছিলেন আজম খান, ফিরোজ সাঁই, পিলু মমতাজ ও ফেরদৌস ওয়াহিদ। এই ৫ জনের মধ্যে তিনজনই পাড়ি দিয়েছেন পরপারে। সর্বশেষ, এই রাতে (২৩ জুলাই) করোনাভাইরাসের কাছে হেরে গেলেন ফকির আলমগীরও। পপ গানের শেষ বন্ধুটিকে হারিয়ে অনেকটাই বাকরুদ্ধ ফেরদৌস ওয়াহিদ। বন্ধুর এমন হঠাৎ প্রস্থানে বাংলা ট্রিবিউন-এর সঙ্গে বললেন কিছু কথা-
রাত ১০টার দিকে হার্ট অ্যাটাকের খবর পেয়ে একটা ধাক্কা খেলাম। অথচ বিকেলেও খবর নিলাম, জানলাম ওর অবস্থা উন্নতির দিকে। সেজন্য হার্ট অ্যাটাকের খবরটি ভালো লাগেনি। কিছুক্ষণ পরেই মৃত্যুর খবরটা পেলাম।
ওর সঙ্গে ৪৮ বছরের বন্ধুত্ব। সেই ১৯৭৩ সালের দিকে আমাদের পরিচয়। গণসংগীত গাইতো। আমি তখন পপ গান করি। দুই বছরের মধ্যে ও নিজেও পপ গানে চলে এলো। আমরা একসঙ্গে অসংখ্য শো করেছি। ফকিরের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা গাঢ় হয় ওর বিয়ের সময়। মজার বিষয় হচ্ছে, তার মাথায় বিয়ের পাগড়িটা আমার হাতেই উঠেছিল। এমন হাজার হাজার গল্প রয়েছে আমাদের।
ওর সম্পর্কে আজ এটুকুই বলবো, বন্ধু তো বন্ধুর মতোই আছে। যতদিন বাঁচি- সেই মায়া, মমতা, স্মৃতি তো থাকবেই। সেসব গল্প না হয় অন্যদিন করা যাবে। কিন্তু আজ একটি কথা না বললেই নয়, বাংলাদেশে ও-ই একমাত্র মানুষ যে গণসংগীতটাকে ধরে রেখেছিলো আমৃত্যু।
আমি দ্যর্থহীন কণ্ঠে বলে রাখলাম, আজ থেকে বাংলাদেশ গণসংগীতহীন হয়ে গেল। আজ থেকে সংগীতের এই অসাধারণ ধারাটিতে শূন্যতা তৈরি হলো। এই ঘাটতি কবে কে পূরণ করবে, জানি না। আদৌ হবে কি না, তাও জানি না।
আমাদের পরিচয় ১৯৭৩ সালে। তারপর থেকে অনেক শো করেছি একসঙ্গে। বলিষ্ঠ কণ্ঠ। ওর একটা স্টাইল ছিলো। বলিষ্ঠ মানুষ। মানুষকে মুগ্ধ করতে পারতো গানে ও গল্পে। এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ও একইভাবে ছিলো। খেয়াল করবেন, ও আমাদের সঙ্গে মিশে যেমন পপ ঘরানার গানে যুক্ত হলো, তেমন গণসংগীতাটাকেও আগলে রাখলো পরম মমতায়। এবং ও আসলে পপের আদলে গণসংগীতটাকেই আরও সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করলো।
ওর এই অকাল পরাজয়ের কারণ করোনাভাইরাস। আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। ওর এই পরাজয় আমাদের আরও সচেতন করুক, সেই প্রত্যাশা করি। বন্ধুর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।