প্রচ্ছদ প্রবন্ধ আম্মু তোমাকে ভালোবাসি

আম্মু তোমাকে ভালোবাসি

0

মে মাসের দ্বিতীয় রোববার ছিল মা দিবস। মা সৈয়দা বদরুন্নেসাকে নিয়ে লিখেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও নারীনেত্রী রোকেয়া কবীর এবং রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খানকে নিয়ে লিখেছেন হোসনে নুজহাত খান 


 

ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি, আম্মুর ঘরে-বাইরে দু’জায়গায়ই ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে কাটে। কিন্তু কখনও তার অভাব বোধ করিনি। এমন কখনও হয়নি, আম্মুকে আমার দরকার কিন্তু পাইনি। বাসায় কাজের লোক থাকলেও টিফিন বানানো, পড়ানো থেকে শুরু করে আমার সব দায়িত্ব মা আর দাদু পালন করতেন। আম্মু বাইরে কাজ করত বলে দীর্ঘ সময় আমাকে দাদুর কাছে থাকতে হতো। তাই দাদুও আমার কাছে মায়ের মতোই।

আম্মুর হাতে সেলাই করা পোশাক পরেই কেটেছে আমার ছেলেবেলা। কোথাও ভালো ডিজাইন দেখলেই আম্মু সেটিই আমার জন্য সেলাই করতে বসে যেতেন। আম্মুর সঙ্গে খেলতাম নানারকম খেলা। আমরা অদ্ভুত এক ভাষায় কথা বলতাম। সেটা আম্মু আর আমি ছাড়া কেউ বুঝত না। আমার প্রতিটি জন্মদিন অনেক মজা করে উদ্যাপন করেন আম্মু।

দস্যিপনা যে খুব কম করেছি, তেমন তো আর না! অ্যাড দেখিয়ে তবেই আমাকে খাওয়াতে হতো। আম্মু কষ্ট করে সবক’টি অ্যাড এক ক্যাসেটে রেকর্ড করে রাখতেন। লন্ডনে যখন পড়তে গেলাম, তিন মাস পরপর আম্মু আমার কাছে যেতেন, নিজের হাতে তৈরি খাবার নিয়ে। একা থাকতাম বলেই কী না আম্মুকে কাছে পেয়ে কী যে ভালো লাগত তা বলে বোঝানো যাবে না! এই কিছুদিন আগেও মুম্বাইতে অ্যাডভান্সড মেকআপ কোর্স করতে গিয়েছিলাম। এক ফাঁকে আব্বু-আম্মু ঠিকই গিয়ে হাজির! আমাকে নিয়ে অজন্তা ইলোরা ঘুরিয়ে আনলেন। আম্মু আর আমি দু’জনেই ঘুরতে খুব ভালোবাসি। কাজের চাপে একত্রে সময় বের করা কঠিন, কিন্তু ফাঁক পেলেই ঘুরতে বের হই আমরা মা-মেয়ে। আম্মু পাশে থাকলে এক ধরনের শক্তি অনুভব করি। তার গায়ের গন্ধ আমার ভালো লাগে, আবার আমার ভয়েস ভালোবাসে আম্মু। আমরা দু’জনেই মিউজিক ভালোবাসি। আম্মু চেয়েছিলেন গানটা যেন সিরিয়াসলি নেই। তেমনটি হয়নি বলে আফসোস তার এখনও আছে। আজ এই লেখার মাধ্যমে জানাই, স্যরি আম্মু!

আমাদের মা-মেয়ের সম্পর্কটা অনেকটা বন্ধুর মতো। আমি মায়ের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। প্রতিদিন সকালে কী পরে বেরোব, সেটাও তার কাছে জিজ্ঞেস করি। যে কোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমি প্রথম তার কাছে জানতে চাই। আম্মুর সাজেশন নিতে আমার ভালো লাগে, কমফোর্ট ফিল করি। স্ট্রং লাগে নিজেকে। আমরা দু’জনেই মুভি পছন্দ করি। ভালো কোনো মুভি পেলে একত্রে বসে দেখি। দু’জনে মিলে মাঝে মাঝে রান্না করি। অনেক ডায়েট প্ল্যান করি!

আম্মু অনেক শান্ত প্রকৃতির। গোছালো। ব্যাপারগুলো খুব ভালো লাগে আমার। আমার যে কোনো সমস্যার সমাধান একনিমেষেই দিয়ে দেন। নতুন কিছু করতে গেলে বাধা দেন না কখনও। কাজ প্রত্যাশা অনুযায়ী না হলেও পিঠ চাপড়ে সমর্থনটা দেন। আম্মুও মাঝে মাঝে আমার কাছে সাজেশন চান, সেটা আমার ভালো লাগে। সাধারণত দেখা যায়, বাসায় সাকসেসফুল কেউ থাকলে তার কথাই সবাই শোনে। কিন্তু আম্মু সম্পূর্ণ আলাদা। কাজের ক্ষেত্রেও অন্যের পরামর্শ নেন। সবাই এ বিষয়টি ফেম হ্যান্ডেল করতে পারে না। কিন্তু আম্মু এত বিনয়ী, এত নম্রভাবে তার জনপ্রিয়তাকে সামলান, সেটি অনুসরণীয়। আম্মু আমাকে যেভাবে বড় করেছেন, আমিও চাইব আমার পরবর্তী প্রজন্মকে এভাবেই বড় করতে।

আমার বন্ধুদের কাছেও আমার আম্মু অনেক প্রিয়। আম্মুও তাদের ভালোবাসেন। বাসায় এলে ওরা আগে আম্মু আর দাদুর সঙ্গে আড্ডা দেবে, তারপর আমার রুমে ঢুকে। এখন তো আম্মুর বন্ধুরা আমারও বন্ধু। তাদের বিখ্যাত ‘হাহা হিহি’ গ্রুপের আমিও একজন সদস্য। আমরা একত্রে অনেক মজা করি। শপিং করতে ভালো লাগে না তাই আমার পোশাক আম্মুই কিনে বা বানিয়ে দেন। আব্বু, আম্মু আর আমি তিনজনেই একসঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলি।

আম্মুর হাতের রান্না চমৎকার। মায়ের হাতে খিচুড়ি, সরিষার তেল দিয়ে তেহারি, হালিম, কাস্টার্ড আর চটপটি আমার খুব ফেবারিট। আম্মুর বাসা গোছানো বা রিনোভেট করা দেখতেও মজা লাগে। ওয়ালপেপার থেকে শুরু করে শ্যান্ডেলিয়ার, পর্দার কাপড়, সোফার কাপড়- সব নিজে নিজে ঘুরে ঘুরে কেনেন। আরও একটা ব্যাপার খুব ভালো লাগে, তা হল আম্মুর সব সময় সবদিকে খেয়াল রাখা। সবার প্রতি সমান যত্ন নেয়া, সবার জন্য গিফট কেনা, সবার পছন্দ মাথায় রাখা- সবকিছু। আম্মু কারও জন্য কিছু পছন্দ করেছেন আর সেটা তার পছন্দ হয়নি, এমন কখনও হয়নি। আমি আমার আম্মুকে অনেক ভালোবাসি। তা কেবল মা বলে নয়, একজন মানুষ হিসেবেও। তার মতো মা পাওয়াটা সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার।

সূত্র: অনলাইন ডেক্স

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here