ঝরনা রহমান: মুঘল শাসনামলে বাংলার বস্ত্রশিল্প বিশেষ করে জামদানি ও মসলিন ব্যাপক সুখ্যাতি অর্জন করে। এরপর ব্রিটিশরা বাংলার এই ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার বহু চেষ্টা করেছে। অনেকখানি সফলও হয়েছে কিন্তু তার পরও এখনো হারানো গৌরব ধরে রাখার প্রচেষ্টা হিসেবে টিকে আছে তাঁতশিল্প। ঢাকার জামদানি যেমন বিখ্যাত তেমনি টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়িরও রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও সুখ্যাতি। তাঁতের শাড়ির প্রসঙ্গ এলে প্রথমেই চলে আসে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির কথা। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির প্রসঙ্গে জানাচ্ছেন চরকার ডিজাইনার জাভেদ কামাল।
নরম, টেকসই, আরামদায়ক হওয়ায় এই শাড়ি এ দেশের নারীদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়। আধুনিকতার ছোঁয়ায় টাঙ্গাইলের শাড়িতে এসেছে অনেক বৈচিত্র্য। মিহি জমিন আর তুলনামূলক ভারী পাড়, সেই সাথে কারুকাজ করা আঁচল এই তাঁতের শাড়ির বৈশিষ্ট্য। টাঙ্গাইলের শাড়ির বুবননে রয়েছে নিজস্ব ডিজাইন ও নকশা। ফুল, জ্যামিতিক ডবি, জ্যার্কাড, নকশা, কলকা বিভিন্ন মোটিফ ফুটিয়ে তোলা হয় শাড়ির জমিনে। টাঙ্গাইলের শাড়ির মোটিফ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভ্রমরা, তাবিজ, রাজমহল, অর্ধচন্দ্র, চাঁদমালা, রতনচোখ, নীলাম্বরী, বেনকি, তারা, ফুলপাতা। পেইন্ট, হ্যান্ডপেইন্ট, অ্যামব্রয়ডারি, কারচুপি প্রভৃতি মাধ্যমও ব্যবহার করা হয় ডিজাইনে বৈচিত্র্য আনতে। আজকাল অনেক আধুনিক নকশা ও মাধ্যম ব্যবহার করা হয় টাঙ্গাইল শাড়িতে ডিজাইন ফুটিয়ে তোলার জন্য।
টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি পুরোপুরি হাতের সাহায্যে তৈরি শাড়ি। হ্যান্ডলুমের এই শাড়ি তৈরির সময় এর মান যেন অক্ষুণ্ন থাকে সে বিষয়ে বিশেষ যত্ন নেয়া হয়। টাঙ্গাইল শাড়ির বৈচিত্র্যের কথা বলে শেষ করা যাবে না। ক্যাজুয়াল বা উৎসবে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত শাড়ি যেমন আছে তেমনি উৎসব অনুষ্ঠানে পরার মতো গর্জিয়াস বা জমকালো শাড়িও পেয়ে যাবেন টাঙ্গাইল শাড়ির ভাণ্ডার থেকে। ছোট বুটি, বড় বুটি, চওড়া ও চিকন পাড়, চওড়া আঁচল, জড়ির সুতা দিয়ে করা নকশা, জামদানি নকশা, হাফ হাফ, চেক, ডুরে, অলওভার কাজ, প্লেন জমিন আরো কত ধরনের নকশা যে টাঙ্গাইলের শাড়িতে করা হয় সে কথা বলে শেষ করা যাবে না। দেশের সীমা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও টাঙ্গাইল শাড়ির চাহিদা ব্যাপক।