প্রচ্ছদ জানা-অজানা কাঁঠাল বিচির যতগুণ

কাঁঠাল বিচির যতগুণ

0
ফাহমিদা শিকদার: কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল হলেও এ ফলের প্রতি মানুষের অনীহার শেষ নেই। অনেকে আছেন, যাঁরা এটি খেতে পছন্দ করেন না। কিন্তু এর বিচি বেশির ভাগ মানুষের প্রিয় খাবার। এখন চলছে পাকা কাঁঠালের মৌসুম। ঘরে আনা এ ফল না খেলেও ঠিকই এর বিচি খাওয়া হবে। এমনকি বাজারে আলাদা কেজিদরেও কিনতে পাওয়া যাচ্ছে এটি। বর্ষাকালে তাওয়ায় সেঁকা কাঁঠালের বিচি আর চা হলে বিকেলের নাশতায় আর কিছু না হলেও চলে। এর রয়েছে বাদামের মতো টেক্সচার। এটি দিয়ে বানানো যায় অনেক মজার সব ঝাল এবং মিষ্টি পদ। এর গুণপনারও কোনো শেষ নেই। তাই শরীর সুস্থ রাখতে ডায়েটে কাঁঠালের বিচি যোগ করা যেতেই পারে।
অন্যান্য ট্রপিক্যাল ফলের বিচির তুলনায় কাঁঠালের বিচি অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে স্টার্চ, প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। এক আউন্স বা ২৮ গ্রাম কাঁঠালের বিচিতে আছে মাত্র ৫৩ ক্যালরি, ১১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ২ গ্রাম প্রোটিন, দশমিক ৫ গ্রাম ফাইবার, দৈনিক পুষ্টি চাহিদার ৮ শতাংশ রিবোফ্লাভিন, ৭ শতাংশ থায়ামিন, ৫ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম এবং ৪ শতাংশ ফসফরাস।
কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে থায়ামিন ও রিবোফ্লাভিন। উভয়ই ভিটামিন বি। এরা শরীরে শক্তি সঞ্চয়ের পাশাপাশি নার্ভস সিস্টেম, হৃদ্‌যন্ত্র, মস্তিষ্ক, অন্ত্র, মাংসপেশি ইত্যাদির রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে।
এতে আছে ফাইবার ও রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ। এরা শরীরে সহজে হজম হয় না। কিন্তু অন্ত্রে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়াদের খাদ্য হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া ফাইবার ও রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ মাত্রাতিরিক্ত ক্ষুধা নিবারণ করে, রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়, হজমক্রিয়া ও ইনসুলিন সেনসিটিভির উন্নতি ঘটায়।

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রভাব

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে বেশ কিছু অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। ডায়রিয়া, গ্যাসের সমস্যায় আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় এর গুঁড়া ব্যবহার করা হতো। কাঁঠালের বিচির পৃষ্ঠতলে ছোট ছোট কণা আছে, যেগুলো একধরনের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট। পরীক্ষায় প্রমাণিত, এজেন্টগুলো সাধারণ ব্যাকটেরিয়া যেমন ই–কোলাইয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া সাধারণত ডায়রিয়া বা অন্যান্য খাদ্যজনিত পেটের অসুখের মতো সমস্যা তৈরি করে।

আছে অ্যান্টিক্যানসার উপাদান

কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে অনেক উদ্ভিদ যৌগ এবং অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের ভেতর রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েডস, স্যাপোনিনস, ফেনোলিকস। গবেষণায় এসেছে যে এই উদ্ভিদ যৌগ এবং অ্যান্টি–অক্সিডেন্টগুলো শরীরের ইনফ্ল্যামেশনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। বাড়াতে পারে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। এমনকি করতে পারে ডিএনএর ড্যামেজ রিপেয়ার।
সম্প্রতি করা একটি টেস্ট টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে, কাঁঠালের বিচির এক্সট্রাক্ট বা নির্জাস ক্যানসারযুক্ত রক্তনালির গঠন ৬১ শতাংশ হ্রাস করে।

অন্যান্য ফলের বিচির মতো কাঁঠালের বিচিতে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় উভয় ফাইবার থাকে। এ ধরনের ফাইবার বাওয়েল মুভমেন্ট বা অন্ত্রের কার্যকলাপ সঠিকভাবে পরিচালনা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অদ্রবণীয় ফাইবারগুলোকে প্রিবায়োটিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই ফাইবার খেয়ে বেঁচে থাকে উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো। এ ছাড়া এগুলো অন্ত্রের কোষগুলোতে বিশেষ পুষ্টি সরবরাহ করে সুস্থ হজমব্যবস্থা বজায় রাখে। এ ফাইবারগুলো ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ এবং হেমোরয়েডের লক্ষণ থেকে মুক্তি দিতে পারে। অনেকগুলো গবেষণায় এসেছে, এ ধরনের ফাইবার আছে, এমন খাবার বেশি করে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে উপশম পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে এ সময়ে বেশি করে কাঁঠালের বিচি খেতে পারেন।
কাঁঠালের বিচির গুণাগুণ

কোলেস্টেরল কমায়

একটি গবেষণায় এসেছে যে কাঁঠালের বিচি রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) কমায় আর ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বাড়ায়। এইচডিএল হৃদ্‌যন্ত্রের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। আর এলডিএল মানে খারাপ কোলেস্টেরল হৃদ্‌রোগের পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
চাইলেই কাঁঠালের মৌসুম শেষ হলেও এর বিচি অনেক দিন সংরক্ষণ করে খাওয়া যায়। আগেকার দিনে গ্রামে বালুর নিচে চাপা দিয়ে বিচি রেখে দেওয়া হতো। কারণ, কাঁঠালের বিচি আর্দ্রতায় নষ্ট হয়ে যায় তাড়াতাড়ি। আর বালু একে শুকনা রাখে। এখনো এই একই পন্থায় সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এ জন্য সবার প্রথম কাঁঠালের বিচি পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে এক ঘণ্টা। এরপর এক দিন অপেক্ষা করে, একটি জারে শুকনা বালু বা মাটি দিয়ে লেয়ারিং করে চাপা দিয়ে রাখতে হবে।
এ ছাড়া কাঁঠালের বিচি সেদ্ধ করে ডিপ ফ্রিজে অনেক দিন রেখে দেওয়া যায়। আবার এটি চুলায় রোস্ট করে, মানে তাওয়ার ওপর ভালো করে সেঁকা দিয়ে শুকিয়ে গুঁড়া করে রাখা যায়। যেকোনো তরকারি রান্নার সময় এটি মিশিয়ে দিলে সেই খাবারের স্বাদ এবং পুষ্টিমান অনেক বেড়ে যাবে।