অনলাইন ডেস্ক:চুরি যাওয়া রিজার্ভের প্রায় দেড় কোটি ডলার ফেরত পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ গোয়েন্দা বিভাগের দুই কর্মকর্তা বর্তমানে ফিলিপাইনে অবস্থান করছেন। তাদের উপস্থিতিতে ফিলিপাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ এই অর্থ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশি টাকায় এই অংক প্রায় ১২১ কোটি টাকার মতো। ফিলিপিন্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ ইতোপূর্বে জানিয়েছিলেন, ফিলিপাইনের ক্যাসিনো মালিক কিম অং এবং তার ইস্টার্ন হাওয়াই লেজার কোম্পানির ফেরত দেয়া দেড় কোটি ডলার ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গচ্ছিত ছিল। এই অর্থ এখন বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হলো। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শেষ হলে সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে এই অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের সাথে যুক্ত হবে।
উল্লেখ্য, গত ৪ ফেব্রুয়ারি হ্যাকিং এর মাধ্যমে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক, নিউ ইয়র্কে পরিচালিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ লেনদেনকারী হিসাব হতে মোট ৭০টি ভুয়া পেমেন্ট অর্ডারের মাধ্যমে সর্বমোট ১৯২ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার অবৈধভাবে স্থানান্তরের চেষ্টা করা হয়। এর মধ্যে একটি পেমেন্ট অর্ডারের বিপরীতে শ্রীলংকায় ২ কোটি ডলার চলে যা। চারটি বার্তার বিপরীতে মোট ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনের একটি ব্যাংকের চারজন গ্রাহকের হিসাবে প্রেরণ করা হয়। শ্রীলংকার একটি অখ্যাত এনজিওর একাউন্টে ওই অর্থ প্রেরণ করা হলেও পরবর্তীতে সেটি আটকে যায়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুরোধে সম্পূর্ণ অর্থ ইতোমধ্যে ফেরত প্রদান করেছে। ফিলিপাইনে প্রেরিত ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার রিজাল কর্মার্শিয়াল ব্যাংকের চারটি হিসাবে জমা হয় এবং সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংকের একই শাখায় পরিচালিত অপর একজন গ্রাহকের হিসাবে জমা হয় যা পরবর্তীতে একটি মানি রেমিটেন্স কোম্পানি হয়ে ফিলিপাইনে পরিচালিত ক্যাসিনোতে চলে যায়। পরবর্তীতে তা একজন ফিলিপিনো-চাইনিজ ব্যবসায়ী কর্তৃক তুলে নেয়া হয়। ফিলিপাইনের একটি গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় সেসময় বেশ আলোড়ন তৈরী হয়। সেসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান এজন্য পদত্যাগ করেন। রিজার্ভ চুরির বিষয়ে ড. ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়। গঠিত তদন্তকারী দলের দেয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক ব্যাক্তির জড়িত থাকার তথ্যও উঠে এসেছে।
অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ হতে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতা চাইলে রিজাল ব্যাংকের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তে নামে এন্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল। পরবর্তীতে বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে ১৫ মিলিয়ন বা দেড় কোটি ডলার বাংলাদেশকে ফেরত প্রদানের জন্য এন্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিল ও কিম অং কর্তৃক আদালতে একটি ‘জয়েন্ট মোশন’ দাখিল করা হয় এবং আদালত ১ জুলাই অর্থ বাজেয়াপ্ত করার আদেশ জারি করে। এর ফলে দেড় কোটি ডলার ফেরত প্রদান প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত ধাপ অর্জিত হয়। ফিলিপাইনের স্থানীয় আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংককে এফিডেভিটের মাধ্যমে আদালতে এ অর্থ ফেরত প্রদানের জন্য আবেদন করতে হয়। এর পর এই অর্থ ফেরত পায় বাংলাদেশ। তবে এখনও হ্যাক হওয়া অর্থের একটি বড় অংশের কোন হদিস মিলছে না। ধারণা করা হচ্ছে, রিজার্ভের চুরি হওয়া অর্থের একটি বড় অংশ পুনরায় কোনও বৈদেশিক মুদ্রায় রূপান্তর করে অন্য কোথাও পাচার করা হয়েছে।