অঞ্জন রায় চৌধুরী: ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জি আর নেই। তিনি গতকাল মঙ্গলবার ভারতের স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৫১ মিনিটে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। শুভ্রা মুখার্জি শ্বাসকষ্টজনিত অসুখে ভুগছিলেন। তার হূদরোগের সমস্যাও ছিল। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে নয়াদিল্লির আর্মি রিসার্চ অ্যান্ড রেফারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। আজ বুধবার দিল্লিতে তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে। শুভ্রা মুখার্জির জন্ম ১৯৪০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের নড়াইলে। ১৯৫৭ সালের ১৩ জুলাই প্রণব মুখার্জির সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে অভিজিত্ মুখার্জি, ইন্দ্রজিত্ মুখার্জি ও শর্মিষ্ঠা মুখার্জি। অভিজিত্ মুখার্জি পশ্চিমবঙ্গ থেকে কংগ্রেসের নির্বাচিত এমপি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন স্নাতক ডিগ্রিধারী শুভ্রা মুখার্জি। রবীন্দ্র সঙ্গীত ও কবিতা আবৃত্তিতেও পারদর্শী ছিলেন তিনি। চিত্রশিল্পী ও লেখক হিসেবেও পরিচিতি ছিল তার। ‘চোখের আলোয়’ এবং ‘চেনা অচেনায় চিন’ নামে তিনি দু’টি বইও লিখেছেন। তিনি গীতাঞ্জলী সঙ্গীতের দল প্রতিষ্ঠা করেন। নড়াইলে এখনো শুভ্রা মুখার্জির আত্মীয়-স্বজন আছেন। ২০১৩ সালে প্রণব মুখার্জির বাংলাদেশ সফরকালে শুভ্রা মুখার্জি স্বামীর সঙ্গে নড়াইলে তাঁর পৈতৃক বাড়িতে গিয়েছিলেন।
পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের মুখ্যমন্ত্রীর শোক:
শুভ্রা মুখার্জির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মমতা এক টুইটার বার্তায় বলেন, তিনি শুভ্রা মুখার্জিকে ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চিনতেন এবং তিনি খুবই সাধাসিধে ছিলেন। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি যাবেন বলে জানিয়েছেন। আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও ভারতের ফার্স্ট লেডির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
প্রণব মুখার্জি হয়ে ওঠার পেছনে ছিলেন শুভ্রাই:
আজকের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি হয়ে ওঠার পেছনের কারিগর ছিলেন স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জি। গতকাল ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘ কয়েক দশকের সম্পর্ক। ব্রাহ্মণের ঘরের ছেলে প্রণবের সঙ্গে অব্রাহ্মণ শুভ্রার বিবাহ নিয়ে পরিবারের আপত্তি ছিল। রক্ষণশীল পরিবারের ছেলে হয়েও প্রণব মুখার্জি প্রথা ভেঙে বিয়ে করেছিলেন শুভ্রাকে। ১৯৬৯ সালে তিনি যখন রাজ্যসভায় বাংলা কংগ্রেসের সদস্য হয়ে দিল্লি গেলেন। তখন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত শুভ্রাই ছিলেন তাঁর জীবনসঙ্গিনী।
দাম্পত্য জীবনে সব সময়েই মেঘ-রোদ্দুরের খেলা থাকে। জীবনে অনেক চড়াই-উত্?রাই আসে। সম্পর্কও নানা রকমের বাঁক নেয়, বহমান নদীর মতো। কিন্তু এই দম্পতি যেন একটু আলাদাই। প্রণব মুখার্জি দুই বার দেশের অর্থমন্ত্রী, দুই বার বাণিজ্যমন্ত্রী এবং দুই বার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন। সব সময়ে তিনি প্রচণ্ড ব্যস্ত ছিলেন। আবার শুভ্রাও ব্যস্ত ছিলেন তাঁর সঙ্গীত জীবন নিয়ে।
রাবি উপাচার্যের শোক:
রাবি সংবাদদাতা জানান, শুভ্রা মুখার্জির মৃত্যুতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক ইলিয়াস হোসান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানান হয়।
কৃতজ্ঞতায়: দৈনিক ইত্তেফাক।