প্রচ্ছদ সফল নারী বাহরাইনের প্রথম নারী গণমাধ্যমকর্মী আহদেয়া আহমেদ

বাহরাইনের প্রথম নারী গণমাধ্যমকর্মী আহদেয়া আহমেদ

0
মো: আবদুস সালিম: আহদেয়া আহমেদ। বাহরাইন টেলিভিশনের একজন নামকরা ব্যক্তিত্ব এই নারী সাংবাদিক। আরো সুন্দর পরিচিতি আছে তার। আহদেয়া বাহরাইন মানবাধিকারেরও মুখপাত্র। তিনি তার পেশাগত যাত্রা শুরু করেন বাহরাইন টিভি চ্যানেল ২তে স্থানীয় ও আঞ্চলিক ব্যক্তিদের সাথে সাম্প্রতিক ঘটমান বিষয় ও আঞ্চলিক রাজনীতি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে। বাহরাইন সংসদীয় নির্বাচন ২০০৬-এ তিনি সরকারি মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন।
আহদেয়া বাহরাইন ৫৫টিভি চ্যানেলের প্রধান এবং প্রথম দেশটির মিডিয়াব্যক্তিত্ব হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন দুই দশক ধরে। রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে থাকেন ইংরেজিতে। গালফ ডেইলি নিউজ নামক ইংরেজি পত্রিকায় প্রথম সংবাদকর্মী হিসেবে যোগদান করেন ১৯৯১ সালে। বাহরাইনের ইংরেজি ভাষার পত্রিকার প্রথম নারী সাংবাদিকও তিনি। ১৯৯২তে বাহরাইন টিভির সংবাদপাঠিকা হিসেবে যোগদান করেন এবং রাজনৈতিক টক শোতে যোগ দেন ১৯৯৩ সালে। ১৯৯৭ সালে বাহরাইন ট্রিবিউনের উদ্বোধনে অংশ নেন। তিনি ক্যাবিনেট বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে মিডিয়া পরামর্শক হিসেবে যোগদান করেন এবং সেখান থেকে গণমাধ্যম পরিকল্পনা ও অধ্যয়ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এরপর টিভির বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিভিন্ন ধরনের উন্নততর ধারণা সৃষ্টি করেন, যা সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প উন্নয়নে ব্যাপক সহায়তায় আসে।
আহদেয়া আহমেদ লিচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে গণমাধ্যমের ওপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। অতঃপর ২০০৬ সালে সংসদীয় ও পৌরসভা নির্বাচনসংক্রান্ত বিষয়ে বাহরাইনের গণমাধ্যমব্যক্তিত্ব হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। তিনি সরকারিভাবে নির্বাচন বিষয়ের ওপর প্রবক্তা ছিলেন, যা এ ধরনের পদবির ক্ষেত্রে ছিল প্রথম কাতারে। নির্বাচনসংক্রান্ত উচ্চ নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন এবং গণমাধ্যম জগতে জনসংযোগ বিভাগের প্রধান ছিলেন। স্বপ্রণোদিতভাবে মানবহিতৈষী কর্মকাণ্ডের জন্য বাহরাইনের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সমিতির সদস্য হন ২০০৪ সালে। বাহরাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের চতুর্থ বছরের জন্য বোর্ড মেম্বার নিযুক্ত হন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সাংস্কৃতিক বিভাগের চেয়ারপারসন নিযুক্ত হন। যুক্তরাষ্ট্রের ইউএন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং প্রশংসাপত্র লাভ করেন জাতিসঙ্ঘের মহাসচিবের কাছ থেকে। এই প্রশিক্ষণই তাকে জনগণের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা ও বিভিন্ন মিডিয়ার সাথে কাজ করার শক্তিকে শাণিত করে। জাতিসঙ্ঘের স্টেট ডিপার্টমেন্টের আমন্ত্রণে আহদেয়া আহমেদ তিন সপ্তাহব্যাপী ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর লিডারশিপ প্রোগ্রামে যোগদান করেন। সে সংস্থাটি সংবাদ পরিবেশন ও জনসংযোগ বিষয়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেয়। এর সদর দফতর ওয়াশিংটনে। আহদেয়া সংবাদ পরিবেশন ও গণমাধ্যমসংক্রান্ত বিষয়ে ওয়াশিংটন, আলবেনি, নিউ ইয়র্ক, আটলান্টা, কলাম্বিয়া ও ক্যালিফোর্নিয়ায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অংশ নেন।
বাহরাইনে টিভি দর্শকদের কাছে তিনি যেন একজন ‘পবিত্র’ মুখ। এই সংবাদকর্মী একই সঙ্গে রেডিও এবং ইংরেজি ভাষা পত্রিকায় সমান ভূমিকা রেখেছেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে মিডিয়া যোগ দেন তিনি এবং সেই থেকে কর্মজীবন ও শিক্ষাজীবন একই সঙ্গে চালাতে চেয়েছেন। গালফ নিউজ ডেইলি পত্রিকার লেস হুরটন তাকে কর্মজীবনে ওপরে ওঠার সিঁড়ি দেখিয়েছেন। বর্তমানে কোনো বিষয়ে প্রবন্ধ লেখা বা প্রতিবেদন তৈরিতে যে কৌশল প্রয়োজন তা তিনিই শিখিয়েছেন।
গণমাধ্যম জগতে তার এই সাফল্যের ব্যাপারে রোল মডেল হিসেবে ভূমিকা রাখেন তার মা। আহদেয়া বলেন, একজন ভালো পিতা-মাতাই এ ক্ষেত্রে উৎসাহের সফল উৎস হতে পারেন। রোল মডেল হিসেবে ভূমিকা রাখেন তার পিতাও। যিনি ছিলেন যথেষ্ট উদার, মহৎ ও বাস্তববাদী। তার মা পাঁচ সন্তানকে বড় করেন অন্যের সাহায্য ছাড়াই। মেয়ের সফলতার ব্যাপারে সর্বাত্মক স্বাধীনতা প্রদান করেন আদর্শ এই বাবা-মা।
এ দিকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেও কথা বলেন আহদেয়া আহমেদ। গত ২৪ নভেম্বর মিসরের উত্তরাঞ্চলীয় সিনাই প্রদেশে একটি মসজিদে জুমার নামাজ চলাকালে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের অতর্কিত গুলি ও বোমা হামলার ঘোর সমালোচনা করেন। কারণ এতে মারা গেছে প্রায় ২৩৫ জন। আহত হয়েছে প্রায় ১২৫ জন। গণমাধ্যমে ‘নজিরবিহীন’ উল্লেখ করা হয়েছে এ হামলাকে। এখানে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা ব্যাপক বৃদ্ধি পায় ২০১৩ সাল থেকে। এসব হামলায় এ পর্যন্ত মারা গেছে প্রচুর পুলিশ, সেনা ও বেসামরিক লোক। আহদেয়া আহমেদ বলেন, ‘সাম্প্রতিক এ হামলার ভিডিও দেখার সাহস বা মানসিকতা আমার মোটেই ছিল না। এই দৃশ্য এখানকার অতীতে ঘটা আরো হৃদয়বিদারক দৃশ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তখনো আমি সংবাদকর্মী ছিলাম। এ জাতীয় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই ধর্ম বা বিশ্বাসের। তা কেবলই কলুষিত রাজনীতি। এর সঙ্গে জড়িতরা ধর্মের নামে ইসলামের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে চায়। মসজিদ ও জুমার নামাজই যেন তাদের টার্গেট। একজন মুসলমান নারী হিসেবে আমি খুবই লজ্জাবোধও করছি। ১৯৯৭ সালের নভেম্বরের এক পর্যটন স্পটে চলেছিল লুক্সর হত্যাকাণ্ডটি। বিষয়গুলো মোটেই হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। কারণ ভবিষ্যতে এ ধরনের বড় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যে আবার ঘটাবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? এমন মন্তব্যও করেন আহদেয়া আহমেদ।

 

কৃতজ্ঞতায়: নয়াদিগন্ত