প্রচ্ছদ ফিচার বিলেতে বাঙালিয়ানা: স্বদেশী ঐতিহ্যের মসলিন, জামদানিই হোক প্রথম পছন্দ

বিলেতে বাঙালিয়ানা: স্বদেশী ঐতিহ্যের মসলিন, জামদানিই হোক প্রথম পছন্দ

0
ছবি: ইন্টারনেট।
শাহনাজ সুলতানা: বাঙালি নারীর প্রিয় পোশাক শাড়ি। শাড়িতে বাঙালী নারীর রুপ ও সৌন্দর্য ফুটে উঠে যা অন্য কোন পোশাকে ফুটে  উঠে না। শুধুমাত্র  বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর যে প্রান্তেই বাঙালি ললনারা বসবাস করেন না কেন  ফ্যাশন সচেতন নারীরা বিভিন্ন উৎসবে অন্যান্য পোশাকের চাইতে শাড়িকেই প্রাধান্য দেন এবং শাড়িতেই মেলে ধরেন নিজের সৌন্দর্য।
বিশ্বের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাঙালি নারীদের মতো আমাদের বিলেতের নারীরাও পিছিয়ে নেই। বিশেষ করে ঈদ, পুজো, বর্ষবরণসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কমবেশি সবাই শাড়ি কিনেন । তবে এখানকার নারীরা যে শাড়িগুলো পরেন তা বেশির ভাগই ভিনদেশি সিল্ক, কাতান, নেট, বেনারসীসহ অন্যান্য। বাংলাদেশের জামদানী, মণীপুরী বা টাঙ্গাইল শাড়ি অন্যান্য দেশের শাড়ির মতো এখনো বিলেতের বাজার দখল করতে পারেনি। লন্ডনের পরিচিত এশিয়ান শপিং সেন্টার গ্রীণষ্টীট, ইলফোর্ড লেন অথবা সাউথ হলের অধিকাংশ দোকানগুলোতে ঢুকলেই দেখা যায় পাশ্ববর্তী দেশের বাহারী শাড়ির সমাহার। গ্রীণষ্টীটে হাতেগুনা যে ক’টি বাংলাদেশী শাড়ীর দোকান রয়েছে তাতে ক্রেতাদের উৎসাহ এবং পদারচনা অন্যান্য দোকানের চেয়ে একেবারে কম।
প্রশ্ন জাগে বিলেতের অধিকাংশ শাড়ির ক্রেতা যদিও বাংলাদেশী তবে দেশীয় শাড়ির বাজার কেন খুব একটা সুবিধাজনক নয়? বাংলাদেশের মসলিন, জামদানী, বেনারসী শাড়িগুলোর পরিবর্তে  বিভিন্ন উৎসবে প্রচুর টাকা খরচ করে আমাদের নারীরা কেন বেছে নেন ভীনদেশি শাড়ি। প্রতি বছর সামারে অনেক বাঙালি নারীকে শাড়ি পরতে দেখা যায়। যারা শখ করে সামারে শাড়ি পরেন তারা কেন দেশীয় মনিপুরি, জুম, জামদানি, টাঙ্গাইল, খেশ বা সূতীর শাড়িগুলো পরেন না, অসুবিধা কোথায়?  প্রশ্নটা বেশ কিছুদিন যাবত মাথায়  গুরপাক খাচ্ছিল।
ছবি: সংগৃহীত।
প্রবাসে দেশীয় শাড়ি পরতে অসুবিধা কোথায় জানতে কিছুদিন পূর্বে বিলেতের বেশ কয়েকজন বাঙালি নারীকে প্রশ্ন করেছিলাম। উত্তরে অধিকাংশ নারীরা বলেছেন ‘ বাংলাদেশের শাড়ি বিশেষ করে সূতীর শাড়ির প্রতি তাদের দুর্বলতা রয়েছে প্রচুর কিন্তু সূতীর শাড়ি পরতে অনেক ঝামেলা। একবার ধুয়ে দিলে পরে আর পরা সম্ভব হয় না একেবারে নেতিয়ে যায়। বেশির ভাগ নারীই বলেছেন তারা বাইরে কাজ করেন সূতীর শাড়ি কলপ দিয়ে ধুয়ে ইস্ত্রী করার মতো সময় তাদের হাতে নেই। অনেকে আবার অভিযোগের সুরে বললেন সূতীর শাড়ি একবার ধুয়ে দিলে কাপড়ের আগের রঙ থাকে না অথবা ধুয়ার পর শাড়ি ছোট হয়ে যায় হেঁটে যাওয়ার সময় শাড়ি উপরে উঠে যায়। তাই তারা জর্জেট বা অন্যান্য সিল্কের শাড়ি পরতে স্বচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

 

ছবি: সংগৃহীত।
আগেকার দিনে বেনারসি ছিলো বিয়ের কনেদের পছন্দের তালিকায় প্রথম। লাল বেনারসি দিয়ে বউ সাজাতে অনেকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন এবং ঐ শাড়ি ছাড়া নতুন বউয়ের সাজ অনেকের কাছে অসম্পূর্ন মনে হতো। বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন ধরণের শাড়ি, লেহেঙ, ফিসটেল বা লং ড্রেস বিয়ের বাজার দখল করলেও বর্তমান বাজারে আবারো ফিরে এসেছে সেই ঐতিহ্যবাহী বেনারসী। বিয়ে এবং অন্যান্য ছোট বড় অনুষ্ঠানে বাঙালি অধিকাংশ নারীরা এখন প্রাধান্য দিচ্ছেন বিভিন্ন ডিজাইনের বেনারসী যার অধিকাংশ বাংলাদেশের পাশ্ববর্তী দেশ থেকে আমদানী হয় বিলেতে। আমাদের দেশের বেনারসী শাড়িগুলো উন্নতমানের হওয়া সত্ত্বেও বিলেতের বাজারে কেন এখনো তেমন প্রচার পাচ্ছে না বা ক্রেতারা কেন উৎসবগুলোতে এ শাড়িগুলো কিনছেন না ।

 

বাংলাদেশের বেনারসী, মসলিন বা জামদানি শাড়িগুলো এখানকার বাজারে প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রচার না পাওয়ার কারণ জানতে  গত সপ্তাহে আরো চার জন মহিলাকে প্রশ্ন করেছিলাম যারা মোটামোটি দেশীয় সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত। উত্তরে তারা বললেন ‘ আমাদের দেশের বেনারসী শাড়িগুলোর মান অনেক ভালো, বর্তমানে ঢাকার মীরপুর বেনারসী পল্লীতে আধুনিক ডিজাাইনে মানসম্মত প্রচুর শাড়ি রয়েছে যা এখানে এনে বিক্রি করা সম্ভব। প্রচারের এবং প্রসারের অভাবে ঐ শাড়িগুলো বিলেতের বাজারে এখনো স্থান করে নিতে পারেনি। আমাদের বন্ধুরা দেশে গেলে অনেক ভালো মানের শাড়ি আমাদের জন্য নিয়ে আসে।আমরা বিভিণ্ন অনুষ্ঠানে সেগুলি পরি ভালো লাগে ভিনদেশি অনেকে প্রশংসা করেন। দেশীয় বেনারসী, মসলিন এবং জামদানী শাড়ির চাহিদা আছে কিন্তু এখানকার বাংলাদেশী শাড়ি দোকানগুলোর মালিকরা সে ব্যাপারে উদাসীন।  তারা যদি ভালোমানের দেশীয় শাড়ি আমদানি করে তাদের দোকানে রেখে শাড়িগুলোকে ভালোভাবে প্রচার করতেন তাহলে এখানকার ক্রেতারা নিশ্চয়ই কিনতেন।  ।
ছবি: সংগৃহীত।
অন্যান্য দেশের ক্রেতাদের তুলানায় এখানকার শাড়ির বাজারের অধিকাংশ ক্রেতা বাংলাদেশী। যারা বিভিন্ন উপলক্ষে তিনশ চারশ পাউন্ড খরচ করে অন্যান্য দেশ থেকে আমদানিকৃত শাড়ি কিনেন। ভীনদেশের শাড়ির মতো আমাদের দেশেও উন্নতমানের প্রচুর শাড়ি রয়েছে যা একটু প্রচার পেলে এখানকার বাজারে স্থান পেত খুব সহজেই। নিজ দেশের শাড়ি প্রচারে আমাদের বাংলাদেশী মালিকানাধীন শাড়ির দোকানের মালিকদের এগিয়ে আসা অত্যন্ত প্রয়োজন। তাদের দোকানে  মসলিন, জামদানি, বেনারসিসহ অন্যান্য দেশী শাড়িগুলো প্রমোট করলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের শাড়িগুলো বিলেতের নারীদের কাছে পরিচিত হয়ে উঠবে এবং দেশের অর্থনীতিতে ও বিরাট ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস।