অনলাইন ডেস্ক:ভারতে নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগকে কেন্দ্র করে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে তুমুল রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। শনিবার রাতে দেশের নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে লে. জেনারেল বিপিন রাওয়াতের নাম ঘোষিত হওয়ার পর রবিবার কংগ্রেস ও বামপন্থীরা অভিযোগ করেছেন, অন্ত তিনজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে টপকে এই নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং এদের মধ্যে একজন মুসলিম।
শাসক দল বিজেপির পক্ষ থেকে অবশ্য বলার চেষ্টা হচ্ছে, কংগ্রেস আমলেও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করার অনেক নজির আছে এবং বিরোধীরা কৌশলে এটিকে একটি সাম্প্রদায়িক রং দিতে চাইছে। ভারতের বর্তমান সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ সুহাগ অবসরে যাচ্ছেন এ বছরের শেষ দিনে এবং সাধারণত পরবর্তী ভারতীয় সেনাপ্রধানের নাম দুই মাস আগে ঘোষণা করাই রেওয়াজ।
কিন্তু এবারে সরকার জেনারেল সুহাগের উত্তরসূরির নাম ঘোষণা করেছে মাত্র তেরদিন আগে। আর লে. জেনারেল বিপিন রাওয়াতের নাম ওই পদের জন্য ঘোষণা করা মাত্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিরোধী দলগুলো। কংগ্রেস মুখপাত্র ও সাবেক ক্যাবিনেট-মন্ত্রী মনীশ তিওয়ারি প্রথমে টুইট করে, ও পরে রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বলেছেন তারা মনে করেন এই নিয়োগ অন্যায় ও অনৈতিক।
তিনি বলেন, ‘এই প্রশ্ন অবশ্যই উঠবে যে লে. জেনারেল পবন বক্সি, মহম্মদ আলি হারিজ বা বি এস নেগি’র মতো তিন তিনজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে টপকে কেন এই নিয়োগ দেয়া হল? এই তিনজন ইস্টার্ন, সেন্ট্রাল ও সাউদার্ন আর্মি কমান্ডের কমান্ডার। তাদের তো অনায়াসেই সেনাপ্রধান করা যেত।’
তিওয়ারি বলেছেন, ‘আমরা লে. জেনারেল রাওয়াতের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছি না, কিন্তু এটা অবশ্যই জানতে চাইছি সিনিয়রিটি-তে যিনি চার নম্বর তাকে কেন সেনাপ্রধান বানানো হল এবং বাকি তিনজনকে কেন যোগ্য মনে করা হল না?’ সিপিআই নেতা ডি রাজাও বলেছেন সেনাপ্রধানের নিয়োগকে সব রকমের বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখাই বাঞ্ছনীয়।
বামপন্থীরা যুক্তি দিচ্ছেন সেনাবাহিনী হল সারা দেশের, শুধুমাত্র সরকারের নয়, সুতরাং কিসের ভিত্তিতে এই গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ করা হচ্ছে সরকারের উচিত তার ব্যাখ্যা দেয়া। শাসক দল বিজেপি অবশ্য বলছে, এই নিয়োগ পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারে এবং দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনুযায়ী তিনি যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই সেনাপ্রধান বানাতে পারেন।
বিজেপি পলিসি রিসার্চ গ্রুপের অনির্বাণ গাঙ্গুলি বলেন, ‘কংগ্রেস আমলেও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সিনিয়রিটির রীতি লঙ্ঘন করেছেন তিনি। জেনারেল এস কে সিনহাকে আর্মি চিফ না বানিয়ে বানিয়েছিলেন জুনিয়র এ এস বৈদ্যকে। তবে আমরা মনে করি যোগ্যতা ও পারফরম্যান্সও এক্ষেত্রে বিবেচ্য, সব সময় সিনিয়রিটি মানতেই হবে এর কোনো মানে নেই।’
সম্ভাব্য সেনাপ্রধান হিসেবে লে. জেনারেল মোহামেদ আলি হারিজের নাম উল্লেখ করে কংগ্রেস একটি সাম্প্রদায়িক খেলা খেলতে চাইছে বলেও বিজেপি মনে করছে। ভারতীয় সেনার সাউদার্ন কমান্ডের জিওসি নিজেকে পিএম হারিজ নামেই পরিচয় দেন। কিন্তু কংগ্রেস তাকে উল্লেখ করেছে মহম্মদ আলি হারিজ নামে। ভারতে এখন পর্যন্ত কোনও মুসলিম সেনা কর্মকর্তা সেনাপ্রধান হতে পারেননি। কিন্তু বিজেপির মতে কংগ্রেস তার দায় কিছুতেই তাদের ওপর চাপাতে পারে না।
অনির্বাণ গাঙ্গুলি বলেন, ‘কংগ্রেস সব কিছুকে সাম্প্রদায়িকতার রং দিয়ে দেখেই দেশের মূল্যবান প্রতিষ্ঠানগুলোকে নষ্ট করে ফেলছে। সবাই জানেন আবদুল কালামকে কারা রাষ্ট্রপতি বানিয়েছিলেন এবং তাকে দ্বিতীয়বার ওই পদে ফিরিয়ে না এনে কারা প্রতিভা পাতিলের মতো অকিঞ্চিৎকর ব্যক্তিত্বকে রাষ্ট্রপতি করেছিল!’ এটা ঠিকই যে এ পি জে আবদুল কালাম রাষ্ট্র্রপতি তথা সশস্ত্র বাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিজেপি জোটের শাসনকালেই এবং কংগ্রেস আমলে তিনি মনোনয়ন পাননি।
কিন্তু কংগ্রেস নেতারা পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন, রাষ্ট্রপতি কালামকে নিছক একজন মুসলিম হিসেবে চিহ্নিত করাটাই সঙ্কীর্ণতার লক্ষণ আর কংগ্রেস আমলে কখনওই কোনও মুসলিম সেনাকর্তাকে টপকে অন্য কাউকে সেনাপ্রধান বানানো হয়নি।