নতুন গুড়, নতুন চালে চেনা সব পিঠার স্বাদ তো হলোই। তাতেই কি একটু বৈচিত্র্য আনা যায়? রেসিপি দিয়েছেন সেলিনা আখতার
ধুপি পিঠা উপকরণ: চালের গুঁড়া ৪ কাপ, কুসুম গরম ঘন দুধ আধা কাপ, লবণ সামান্য, কোরানো নারকেল ১ কাপ, কুচি করা খেজুরের গুড় পৌনে এক কাপ, ছানা ১ কাপ, ঘি ১ টেবিল-চামচ।
প্রণালি: প্যানে ঘি, ছানা ও সামান্য খেজুর গুড় নিয়ে একটু ভেজে নামিয়ে রাখুন। এবার একটি বাটিতে চালের গুঁড়া, লবণ ও দুধ একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি বাঁশের চালনিতে চেলে নিন। পিঠা ভাপ দেওয়ার যে পাতিল ব্যবহৃত হবে, সেটি চুলায় দিন। নারকেল ও বাকি গুড় মিশিয়ে নিন। কেক তৈরির মোল্ডে প্রথমে চালের গুঁড়া-নারকেল ও গুড়ের মিশ্রণ চেপে বসান। তার ওপর ছানার মিশ্রণ- নারকেল ও গুড়ের মিশ্রণ সাজান। এভাবে ইচ্ছামতো ২-৩টি ধাপে বাটিটি সুতি কাপড় আটকে নিন। ভাপা পিঠার মতো ভাপ দিন। সেদ্ধ হয়ে গেলে নামিয়ে কেকের মতো উল্টিয়ে পিঠা বের করুন। টুকরা করে গরম গরম পরিবেশন করুন।
বিবিখানা পিঠা উপকরণ: চালের গুঁড়া ২ কাপ, নারকেল কোরানো ১ কাপ, কুচি করা খেজুর গুড় পৌনে এক কাপ, ঘি ২ টেবিল-চামচ, লবণ ১ চিমটি, দুধ দেড় লিটার, বেকিং পাউডার ১ চা-চামচ।
প্রণালি: দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করে দেড় কাপ করে নিতে হবে। ওভেন ১৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপে প্রিহিট করতে দিন। চালের গুঁড়ার সঙ্গে দুধ ছাড়া অন্যান্য সব উপকরণ ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার তাতে দুধ মেশান ধীরে ধীরে। কেক বা পুডিং মোল্ডে ব্যাটারটুকু ঢেলে ৪০/৫০ মিনিট বেক করুন। পিঠাতে কাঠি ঢুকিয়ে বের করে নিন। কাঠিতে ব্যাটার লেগে না থাকলে বুঝবেন পিঠা হয়ে গেছে। তাহলে ওভেন বন্ধ করে দিন। গরম ওভেনে পিঠা আরও ৩০ মিনিট রাখুন। ঠান্ডা হলে কেটে পরিবেশন করুন।
কলাপাতায় বিন্নি চালের পিঠা উপকরণ: বিন্নি চাল ৪ কাপ, দেশি কলা ১০/১২টা, নারকেল (চিড়ার মতো কেটে নেওয়া) ১ কাপ, খেজুরের গুড় সিকি কাপ, লবন আধা চা-চামচ, কলাপাতা রোল করার জন্য যতটুকু লাগে।
প্রণালি: চাল ২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে ফ্যানের বাতাসে চালটা ছড়িয়ে রাখুন ৩০ মিনিট। যেন একেবারে ঝরঝরে হয়। এবার কলাগুলো ভালো করে চটকে নিন যেন কোনো গোটা না থাকে। এবার চাল, কলা, লবণ, গুড় ও নারকেল একসঙ্গে খুব ভালো করে মেখে রাখুন ৩০ মিনিট। কলাপাতাগুলো ধুয়ে রোল করবার সাইজে কেটে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। এবার ভাপ দেওয়ার জন্য স্টিমার প্রস্তুত করুন। পাতার এক পাশে চালের মিশ্রণটা লম্বা রোলের মতো দিয়ে পেঁচিয়ে নিন। এভাবে সবগুলো পিঠা তৈরি করুন। এরপর স্টিমারে পিঠাগুলো মাঝে একটু ফাঁক রেখে সাজিয়ে নিন। স্টিম করুন ৩০/৪০ মিনিট। এর মাঝে একবার পিঠাগুলো ওপর-নিচ করে উল্টিয়ে দিন। এরপর নামিয়ে পরিবেশন করুন। কলাপাতা ছাড়িয়ে খেতে হবে। মাংস-পুলি পুরের উপকরণ: গরুর মাংসের কিমা সেদ্ধ পৌনে এক কাপ, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, রসুন থেঁতলানো ১ টেবিল-চামচ, হলুদগুঁড়া এক চিমটি, মরিচগুঁড়া আধা চা-চামচ, ধনেগুঁড়া আধা চা-চামচ, রোস্টেড জিরা গুঁড়া আধা চা-চামচ, কাঁচা মরিচ কুচি ১ টেবিল-চামচ, চাট মসলার গুঁড়া আধা চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, তেল ২ টেবিল-চামচ, পেঁয়াজপাতা কুচি ও ধনেপাতা কুচি স্বাদমতো।
প্রণালি: প্যানে তেল গরম করে থেঁতলানো রসুন দিয়ে হালকা ভেজে পেঁয়াজ কুচি দিন। কিছুক্ষণ পর সেদ্ধ কিমা দিন। একটু নেড়েচেড়ে হলুদ, মরিচ ও ধনেগুঁড়া দিয়ে একটু পানি দিন। পানি টেনে এলে কাঁচা মরিচ কুচি ও ভাজা মসলার গুঁড়া দিন। পেঁয়াজপাতা কুচি ও ধনেপাতা কুচি দিয়ে নামিয়ে নিন।
পুলির উপকরণ: চালের গুঁড়া দেড় কাপ, ময়দা সিকি কাপ, পানি দেড় কাপ, লবণ স্বাদমতো। প্রণালি: পানি ফুটিয়ে তাতে লবণ, চালের গুঁড়া ও ময়দা দিয়ে অল্প আঁচে ঢেকে রাখুন। সেদ্ধ হলে নেড়েচেড়ে কাই বানান। নামিয়ে হাত দিয়ে মেখে নিন। কাই দিয়ে কয়েকটি রুটি বেলে মাঝখানে কেটে দুই ভাগ করুন। এক ধারে একটু পুর দিয়ে দুই ধার আটকে দিন। এভাবে সবগুলো পিঠা বানিয়ে নিন। তেল গরম করে ভেজে নিন সবগুলো।
ছানার পাটিসাপটা পুরের উপকরণ: ছানা ১ কাপ, কনডেন্সড মিল্ক এক কাপের তিন ভাগের এক ভাগ, ঘি ১ টেবিল-চামচ।
পিঠার উপকরণ: চালের গুঁড়া দেড় কাপ, ময়দা সিকি কাপ, কুটি করা খেজুর গুড় আধা কাপ, ডিম ১টা, লবণ ১ চিমটি, পানি দেড় কাপ, তেল প্যান ব্রাশ করার জন্য যতটুকু লাগে।
প্রণালি: পুরের সব উপকরণ প্যানে দিয়ে। অল্প আঁচে একটু নেড়ে নিন। মাখা মাখা হয়ে এলে নামিয়ে নিন। তেল ছাড়া পিঠার বাকি সব উপকরণ মেখে পাতলা ব্যাটার তৈরি করে নিন, পানি লাগলে কম বেশি করে নিতে পারেন। এই ব্যাটার এক ঘণ্টা রেখে দিন। নন-স্টিক প্যান গরম করে তেল ব্রাশ করুন। বড় ডালের চামচ দিয়ে এক চামচ ব্যাটার ঢেলে প্যানটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রুটির মতো ছড়িয়ে দিন। খেয়াল রাখবেন, রুটিগুলো যেন পাতলা হয়; নইলে মোড়ানোর সময় ভেঙে যাবে। এবার পিঠার এক কিনারে লম্বা করে পুর দিয়ে সাবধানে মুড়িয়ে নিন। চামচ দিয়ে রোলটা একটু চেপে দিন। এভাবে একটা একটা করে সব পিঠা বানিয়ে নিন।
রসুনে হাঁস ভুনা উপকরণ: হাঁসের মাংস ১ কেজি, পেঁয়াজ কিউব কাট আধা কাপ, গোটা রসুন এক কাপের তিন ভাগের এক ভাগ, পেঁয়াজ বাটা ১ টেবিল-চামচ, আদা বাটা ১ টেবিল-চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল-চামচ, মরিচগুঁড়া ২ চা-চামচ (ঝাল বেশি চাইলে আরেকটু দিতে পারেন), হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেগুঁড়া ১ চা-চামচ, জিরা গুঁড়া আধা চা-চামচ, ভাজা জিরা গুঁড়া আধা চা-চামচ, নারকেল মিহি বাটা ১ টেবিল-চামচ, নারকেলের দুধ ১ কাপ, পেঁয়াজ বেরেস্তা ২ টেবিল-চামচ, গরম মসলার গুঁড়া আধা চা-চামচ, তেজপাতা ২/৩টি, ভিনেগার বা লেবুর রস ২ টেবিল-চামচ, তেল সিকি কাপের একটু কম।
প্রণালি: হাঁস পরিষ্কার করে ধুয়ে টুকরা করে ভিনেগার বা লেবুর রস দিয়ে মেখে ১০ মিনিট রেখে দিন। এতে হাঁসের গন্ধটা থাকবে না। এরপর আবার ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রাখুন। চুলায় হাঁড়ি বসিয়ে তেল দিন। তেজপাতা দিয়ে কিউব কাট পেঁয়াজ ও রসুন দিন। এবার একে একে সব বাটা মসলা দিয়ে একটু পানি দিন। এরপর সব গুঁড়া মসলা দিন, শুধু ভাজা জিরা গুঁড়া বাদ দিয়ে। মসলাটা একটু কষিয়ে গোশত দিয়ে দিন এবং নাড়াচাড়া করে ঢেকে দিন। একটু একটু করে পানি দিয়ে মাঝারি আঁচে মাংস কষাবেন। মাংস আধা সেদ্ধ হয়ে এলে নারকেল দুধ ও অর্ধেক পেঁয়াজ বেরেস্তা দিয়ে ঢেকে আঁচ কমিয়ে দিন।
মাংস পুরো সেদ্ধ হয়ে গেলে ভাজা জিরার গুঁড়া দিয়ে ৫ মিনিট রেখে নামিয়ে নিন। বাকি অর্ধেক বেরেস্তা ওপরে ছড়িয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।
মসলাদার চিতই উপকরণ: চালের গুঁড়া ২ কাপ, পানি দেড় কাপ, পেঁয়াজ ও রসুন মিহি কিমা ২ টেবিল-চামচ, লাল ও সবুজ কাঁচা মরিচ থেঁতলানো ২ টেবিল-চামচ, পেঁয়াজপাতা ও ধনেপাতা কুচি ২ টেবিল-চামচ, লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: চালের গুঁড়া, লবণ ও পানি একসঙ্গে গুলিয়ে মসৃণ ব্যাটার বানিয়ে এক ঘণ্টা ঢেকে রাখুন। ব্যাটারটা এমনভাবে করতে হবে যেন খুব ঘন বা পাতলা কোনোটাই না হয়। এ জন্য লাগলে পানি একটু বাড়াতে বা কমাতে পারেন। চুলায় চিতই পিঠার খলা ভালো করে গরম করতে দিন। গরম হলে সামান্য তেল ব্রাশ করুন। পেঁয়াজ-রসুন কিমা, থেঁতলানো মরিচ ও পেঁয়াজপাতা-ধনেপাতা কুচি একসঙ্গে মিশিয়ে রাখুন। এগুলো ব্যাটারে মিশিয়ে দিন। এবার গরম খলায় মাপমতো ব্যাটার দিন। ছোট ঢাকনি দিয়ে ঢেকে দিন। ঢাকনার চারদিকে হাত দিয়ে একটু পানি ছড়িয়ে দিন। হয়ে গেলে পিঠা তুলে নিন। এভাবে একটা একটা করে পিঠা ভেজে তুলুন। গরম গরম পিঠা বিভিন্ন রকম ভর্তা কিংবা হাঁস ভুনার সঙ্গে পরিবেশন করুন।