অনলাইন ডেক্স: মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রধানসহ কয়েকজন পদস্থ সেনা কর্মকর্তা এখন আর ফেসবুকে নেই। ফেসবুক এসব সেনা কর্মকর্তার অ্যাকাউন্ট বাতিল করে দিয়েছে রাখাইনে ‘গণহত্যা’ ও রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো সহিংসতায় তাদের ভূমিকার বিষয়টি জাতিসঙ্ঘের একটি রিপোর্টে উঠে আসার পর।
আর এটাই প্রথমবারের মতো ফেসবুক কোনো দেশের সামরিক বা রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নিষিদ্ধ করলো।
সবমিলিয়ে মিয়ানমারের সাথে সম্পর্কিত ১৮টি অ্যাকাউন্ট ও ৫২টি পেজ সরিয়ে ফেলে ফেসবুক।
অথচ এদের অনুসারীর সংখ্যা প্রায় এক কোটি বিশ লাখ।
মিয়ানমারে ফেসবুকই সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যার ব্যবহারকারী রয়েছে প্রায় এক কোটি আশি লাখ।
তবে জাতিসংঘের রিপোর্ট বলছে, বেশির ভাগ ব্যবহারকারী মনে করেন ফেসবুকই ইন্টারনেট কিন্তু ‘এটাই ঘৃণা ছড়ানোর একটি কার্যকর মাধ্যম’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেখানে।
কি ছিলো জাতিসঙ্ঘ রিপোর্টে?
রোহিঙ্গাদের ওপর সেনা অভিযানের বিষয়ে সম্ভবত এটাই জাতিসঙ্ঘের সবচেয়ে কড়া প্রতিবাদ।একটি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার জের ধরে ওই ভয়াবহ অভিযান চালানো হয় রাখাইনে। হাজার হাজার মানুষ নিহত হয় এবং আরো প্রায় সাত লাখ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যায় প্রতিবেশী বাংলাদেশে।
এসময় রাখাইনে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে যার মধ্যে ছিলে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন।
জাতিসঙ্ঘের রিপোর্টে ছয় সামরিক কর্মকর্তার নাম উঠে আসে আর এ ছয়জনের মধ্যে রয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন আং লিয়ান। রিপোর্টে এদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে তাদেরকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের কথা বলা হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে অনলাইনে কি বলা হচ্ছে?
রয়টার্সের একটি রিপোর্টে গত বছর বলা হয়েছে যে তারা অন্তত এক হাজার পোস্ট, কমেন্টস ও ছবি পেয়েছে ফেসবুকে যেখানে রোহিঙ্গা ও মুসলিমদের আক্রমণ করা হয়েছে।
এসব কমেন্টে রোহিঙ্গাদের ‘কুকুর’, ‘ধর্ষক’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
অনেকের কমেন্টে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি পাওয়া যায় এমনকি একটি পেজে ‘সব মুসলিমকে মেরে ফেলার’ কথাও বলা হয়।
এমনকি বিবিসির ফেসবুক পোস্টগুলোতেও অনেকে রোহিঙ্গাবিরোধী আপত্তিকর মন্তব্য লিখেছেন।
জাতিসঙ্ঘের এই রিপোর্ট নিয়ে প্রকাশিত খবরেও রোহিঙ্গাবিরোধী এমন অনেক মন্তব্য এসেছে।
একজন লিখেছেন, ‘রোহিঙ্গারা বাঙালি.. তারা আগ্রাসনকারী’।
‘তারা বাঙালি খাবার খায়, বাংলায় কথা বলে, বাঙালি পোশাক পরে। বার্মার জনগণের উচিত প্রত্যেকটি বাঙালিকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া।’
সেনাপ্রধান সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে?
সেনাপ্রধান জেনারেল মিন আং লিয়ানের দুটি অ্যাকাউন্ট ছিলো ফেসবুকে।
এএফপি বলছে, একটি অ্যাকাউন্টে অনুসারী ছিলো তের লাখ আর অন্যটি অনুসরণ করছিলেন ২৮ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারী।
মিয়ানমারের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় সেনাপ্রধান খুবই প্রভাবশালী।
একটি ফেসবুক পোস্টে তিনিও রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ হিসেবে চিত্রিত করেন এবং বলেন যে, ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি একটি বানানো শব্দ।
ফেসবুক বলছে, নিষিদ্ধ অন্য পেজগুলোর মতো সেনাপ্রধানের পেজও জাতিগত ও ধর্মীয় উত্তেজনাকে উস্কে দিয়েছে।
মিয়ানমারর নিউজ সাইট মিয়ানমার টাইমসের মতে, দেশটির প্রেসিডেন্টের একজন মুখপাত্র বলেছেন ফেসবুক অ্যাকাউন্টগুলো নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সরকারের সাথে কোনো আলোচনা ছাড়াই।
অ্যাকাউন্টগুলো পুনরায় চালুর বিষয়ে ফেসবুকের সাথে আলোচনার কথাও জানান তিনি।
ফেসবুক আসলে কী করেছে?
২০১৪ সালেই মিয়ানমারে ঘৃণা ছড়ানোর কাজে ফেসবুক ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে।
ওই বছর মার্চেই জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তার মুখেও বিষয়টি উঠে আসে।
জাতিসঙ্ঘ রিপোর্ট বলছে, ঘৃণা ছড়ানোর বিরুদ্ধে ফেসবুকের ব্যবস্থা নেয়ার গতি ধীর ও অকার্যকর।
এতে বৈষম্য ও সহিংসতায় ফেসবুক পোস্ট ও ম্যাসেজ কিভাবে ভূমিকা রেখেছে তার স্বাধীন ও বিস্তারিত তদন্তের কথাও বলা হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত ফেসবুক নিজেও তাদের ধীরগতির ব্যবস্থা নেয়ার কথা স্বীকার করেছে।
যদিও একই সাথে তারা হেট স্পিচ চিহ্নিত করতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা বলেছে।
একই সাথে তারা স্বীকার করেছে যে, মিয়ানমারে অনেকেই নিউজের জন্য ফেসবুকের ওপরই নির্ভর করে থাকেন।
সূত্র: বিবিসি