ক্যান্সারের চিকিৎসার এমন এক পদ্ধতি আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন বিজ্ঞানীরা যা এই প্রাণঘাতী রোগের চিকিৎসায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ‘আমেরিকান এসোসিয়েশন ফর দি অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স’র এক সভায় উপস্থাপিত জরিপে বলা হচ্ছে, ‘জিন প্রযুক্তি-ভিত্তিক এই চিকিত্সা পদ্ধতিতে ‘নাটকীয় ফল পাওয়া যেতে পারে’ বলে বিজ্ঞানীরা ইঙ্গিত পাচ্ছেন।
এর একটি জরিপে ক্যান্সারের চিকিত্সায় ‘টি-সেল’ (ক্যান্সার প্রতিরোধী কোষ) নামে জিনগত পরিবর্তন ঘটানো রোগ প্রতিরোধী দেহকোষ ব্যবহার করা হয়েছে। রোগীর শরীর থেকেই এই কোষ সংগ্রহ করা হয় এবং পরে তা প্রক্রিয়াজাত করে রোগীর শরীরে ফের প্রবেশ করানো হয়। খবর বিবিসি, মেট্রো ও দ্য গার্ডিয়ানের।
রক্তের ক্যান্সারে আক্রান্ত যেসব রোগীর অবস্থা প্রায় শেষ স্তরে পৌঁছে গেছে বা যারা প্রায় মুমূর্ষু অবস্থায় আছেন-তাদের ওপর এই ‘টি সেল’ প্রয়োগ করে চিকিত্সায় চমকপ্রদ ফল পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই পদ্ধতিতে ক্যান্সার থেকে একবার সেরে উঠলে তা যেন আর ফিরে আসতে না পারে তা নিশ্চিত করা সম্ভব হতে পারে যা অনেকটা টিকার মতোই কাজ করতে পারে।
ক্যান্সার গবেষক ড. স্ট্যানলি রিডেলের নেতৃত্বে পরিচালিত হয় এই গবেষণা। গবেষকরা জানান, টি-সেল থেরাপির ক্ষেত্রে চিকিত্সকরা রোগীর দেহ থেকে ইমিউন সেল বা প্রতিরোধী কোষ নিয়ে তার সঙ্গে রিসেপটর অণুকে যুক্ত করে পুনরায় তা রোগীর দেহে প্রতিস্থাপিত করেন। ওই অণু বিশেষ ক্যান্সারকে আক্রমণ করে আর ইমিউন সেল বা টি-সেল (প্রোটিন তৈরিকারী কোষ) ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর থাকে।
গবেষণায় দেখা যায়, অ্যাকিউট লিমফোব্লাস্টিক লিউকোমিয়ায় আক্রান্তদের প্রায় ৯৪ শতাংশ সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। অন্যান্য ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্তদের ক্ষেত্রেও ৮০ শতাংশের বেশি সাফল্য পাওয়া গেছে। অর্ধেকের বেশি রোগীর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উপশম সম্ভব হয়েছে। দেখা গেছে, ক্যান্সার প্রতিরোধী এই কোষ শরীরে ১৪ বছর পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে। ইতালির মিলানের স্যান রাফায়েল সায়েন্টিফিক ইনস্টিটিউটে চিকিত্সকরা ১০ জন রোগীর শরীরে টি সেলের সংমিশ্রণ প্রয়োগ করেছিলেন। এই কোষ ক্যান্সারকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। এই কোষ এক দশকের বেশি সময় শরীরে জীবিত থাকতে পারে। হেমাটোলজিস্ট চিয়ারা বনিনি টি-সেল সম্পর্কে বলেন, টি-সেল হলো একটি জীবন্ত ওষুধ। আর তারা আমাদের শরীরে জীবনভর টিকে থাকতে পারে।
সিয়াটলের ফ্রেড হাচিনসন ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টারে দ্বিতীয় গবেষণা করা হয়। সেখানে ৯৪ শতাংশ রোগী ছিলেন যাদের মৃত্যুর সময় দুই থেকে পাঁচ মাস বাকি আছে বলে চিকিত্সকরা জানিয়েছিলেন। তাদের অনেক পদ্ধতিতে চিকিত্সা করা হলেও তারা সুস্থ হননি। পরে ‘জীবন্ত ওষুধ’ পদ্ধতিতে চিকিত্সা করে পূর্ণ সফলতা পাওয়া যায়। ব্রিটিশ ক্যান্সার গবেষক ড. ক্যাট আরনি বলেন, এই চিকিত্সা সব রোগীর জন্য এখনো কার্যকর হয়নি। তবে সঠিকভাবে করতে পারলে সেটা টিকা হিসাবে কাজ করতে পারে।