আমরা যারা প্রথম বা দ্বিতীয় প্রজন্মের সিলেটী – অনাবাসি আমরা হলিডে বলতে বুঝি দেশে যাওয়া আর দেশ মানে সিলেট যাওয়া। আর সিলেট যাওয়া মানে গ্রামে যাওয়া, আত্বীয়-স্বজনের সাথে দেখা করা দাওয়াত খাওয়া, বিয়ে-শাদী ইত্যাদিতে যাওয়া এই আর কি? আমাদের ধরনের অনাবাসিদের সংখ্যাই বেশি যারা সিলেটকে এখনও ব্রেক নেওয়ার জায়গা হিসেবে মনে করি। ব্রেক নিতে গিয়ে আমাদের থানা-পুলিশ বা আমলা-অফিসারদের সাথে দহরম-মহরম করার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। ৩/৪ সপ্তাহ সিলেটে কাটিয়ে আবার ফিওে আসব এইতো।
তবে কেউ যদি রাজনীতি করেন বা কেউ যদি ব্যবসা বানিজ্য করেন তাদের কথা আলাদা। তাদের পুলিশ- প্রশাসন বা সংশ্লিস্ট কর্ত্তৃপক্ষের সাথে উঠবস করা লাগে। তারা যদি স্যারদের খাতির-তোয়াজ না করেন তাহলে সুবিধা-অসুবিধায় স্যাররা তাদের সুনজরে দেখবেন না। যাদের স্যারদেও সাথে লাইন নেই সেই সব সাধারন প্রবাসিরা এয়ারপোর্টে যাওয়া- আসার সময় যে হেনস্থার শিকার হন তারা কাউকে বলেন না কারন বলে কি হবে? কেন শুনবে তাদের কথা। এই যে আন্তর্জাতিক বিমান যাত্রীদের সিলেট থেকে ঢাকায় এনে বস্তির মত ঝুপড়ি হোটেলে রাখা হয়। কেউ যদি প্রশ্ন করেন এর কারন কি? এর উত্তর হল ১৩/১৪টি হোটেলের মালিক ও ঢাকার বিমান কর্মকর্তারা একটা আয়ের পথ বের করেছে। লন্ডনযাত্রীদের ৫/৬ ঘন্টার জন্যে উত্তরায় হোটেল নামক খুপড়িতে এনে রাখা হয় এতে বেশ কিছু অর্থ-উপার্জন হয়। সিলেট থেকে ঢাকা আসতে ও আসার পর দুইবার ইমিগ্রেশন করা হয়, পরের দিন প্লেনে উঠবার সময় আবার ইমিগ্রেশন করা হয়। এই সময় লাইনে দাড়িয়ে বৃদ্ধ, শিশু ও মহিলাদের যে কি দুর্গতি হয় তা একমাত্র ভুক্তভোগিরা জানেন।
আমাদের মত যারা ¯্রফে একটা ব্রেক নেয়ার জন্যে দেশে যান তাদের কেন এসব ফেস করতে হবে, এরা যখন মরক্কো কিংবা মিশর যান তখনতো আমাদের সাথে এই রকম ব্যবহার করা হয় না। সাধারন অনাবাসিরা বাংলাদেশ বিমান ব্যবহার করেন, কারন তারা দেশে যাবেন ডাইরেক্ট সিলেটে নামবেন। সিলেটে নামার পর থেকেই শুরু হয় জ্বালাতন সিল যিনি মারেন তিনি কিছু আশা করেন, তারপর কাস্টমস অফিসার কিছু আশা করেন, তারপর বাইরের ভিক্ষুকরাও কিছু আশা করে। কোনমতে বাড়ি পর্যন্ত পৌছতে পারলেই হয়। কয়েকদিন বাড়িতে থাকার পর কখন যে লন্ডন ফিরে আসা যায় এরজন্যে উঠে-পড়ে লাগতে হয় কারন সাহায্য প্রার্থীদের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়তে থাকে। কারো অপারেশনের জন্যে টাকা লাগবে, কারও মেয়ের বিয়ে, কারো বা ছেলে কলেজে ভর্তি হবে সব আবেদনই জেনুইন। কাউকে ফেরানো সম্ভব নয়। দিতে দিতে এক সময় ফতুর হয়ে যেতে হয়, বিলাত ফিরে আসারও তাগিদ জোরদার হয়।
এই চিত্র শুধু সিলেটের, উত্তর বঙ্গের গ্রামগুলোর অবস্থা আরো খারাপ বলে শুনা যায় , সিলেটে বিভিন্ন জেলার লোক এসেছে বসবাস করে বস্তিতে আর এসব বস্তি গুলোর অবস্থা খুব খারাপ এগুলো হচ্ছে টাইম বম্ব। এই বস্তিগুলোতে অপরাধ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। সিলেট নগরীর বস্তিগুলোতে মাদকের আখড়া গড়ে উঠেছে , দেহবিক্রির আদিম পেশাও চলে ঐসব বস্তিতে, ঠিকাদার হচ্ছে পলিটিক্যাল টাউটরা। কোন এলাকার দরিদ্র মানুষ যদি কোন ধনী এলাকায় আসে তাহলে তা দোষের কিছু নয়। সিলেটে বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন এসেছে এসব আগত লোকদের সংখ্যা এখন কয়েক লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে, কোন কোন এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানও এখন বাইরের জেলার। এমনকি সিলেটের মেয়র নির্বাচনের জন্যেও এখন বস্তিবাসির ভোটের উপর নির্ভর করতে হয়, আগামী সংস্দ নির্বাচনেও এর বিরাট প্রভাব আছে বলে সংশ্লিস্ট-পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
এই যখন বাস্তব অবস্থা তখন সরকার দ্বৈত্ব-নাগরকিত্ব আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে, এ প্রস্তাবিত আইনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না, যতটুকু লন্ডনে এসে টেলিভিশনের টকশোতে দেখেছি তা থেকে সামান্য কিছু ধারনা হয়েছে মাত্র, এই ধারনা থেকে কিছু লেখার এই প্রয়াস মাত্র। দ্বৈত্ব-নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে এটি যদি আরো অনাবাসি-বান্ধব ও যুগোপযোগি করা হয় তাহলে আমাদের বলার কিছু নাই।
ইমিগ্রেন্টস বান্ধব হওয়ায় এদেশে আমাদের তিনজন এমপি আছেন যারা বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত। বাংলাদেশি মেয়র কাউন্সিলরদের সংখ্যাতো এখন আর ধর্তব্যর মধ্যে নয়, সরকারি -বেসরকারি চাকুরিতে বাংলাদেশি-বংশোদ্ভুতদের সংখ্যাতো প্রচুর। শুধু বৃটেনে কেন এখন ইউরোপ-আমেরিকায় বাংলাদেশিরা যেভাবে সব ক্ষেত্রে সুযোগ গ্রহন করছে সেখানে নিজ দেশের দ্বৈত্ব-নাগরিকত্ব আইন পরিবর্তন করার প্রয়োজনটা কি পড়লো? বলে রাখা ভাল এখনও এই আইন কার্যকর হয়নি, তাই এই আইন প্রণয়নের আগে সরকারকে অবশ্যই এই আইন নিয়ে আলোচনা করতে হবে, অনাবাসি এক্সপার্টদের অভিমত নিতে হবে। আইনটি খসড়া থাকার সময় পর্যালোচনা করতে হবে। তা না হলে অনবাসি বাংলাদেশিদের জন্যে অসুবিধা সৃষ্ঠি করা হবে।একবার যদি আইনটি পাশ হয়ে যায় তাহলে আর কিছু করা সম্ভব হবে না।কাজেই অনাবাসি এক্সপার্টদের এখনি প্রশ্ন তোলা দরকার, এবং সরকারের কাছে তাদের অভিমত তোলে ধরা দরকার। যাতে সরকার তাদেও মত আইন কওে সাধারন অনাবাসিদেও বিপদে না ফেলে।