মুফতি আহমাদুল্লাহ: উত্তম ও যথাযথ প্রস্তুতি মানে যেকোনো কাজের অর্ধপূর্ণতা। ইসলামের সোনালি যুগের কোনো কোনো মনীষী রমজানের ছয় মাস আগে থেকেই রমজানপ্রাপ্তির জন্য দোয়া ও প্রস্তুতি আরম্ভ করতেন। যেসব প্রস্তুতির মাধ্যমে আমরা রমজান মাসকে সার্থক ও অর্থবহ করতে পারি তা নিম্নরুপ-
১. তাওবা এবং ইস্তেগফার করে নেয়া। কেননা, পূর্বের গুনাহের কারণে অনেক সময় নেক আমলের তাউফিক থেকে বঞ্চিত হয় মানুষ। সেজন্য রমজানে প্রবেশের আগেই পূর্বের গুনাহগুলো থেকে খাঁটি অন্তরে তাওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে হালখাতা করে নেয়া উচিত। ২. কুরআন সুন্নাহ থেকে বর্ণিত রমজান ও সিয়ামের ফজিলত, এ মাসের করণীয় এবং সংশ্লিষ্ট মাসায়েল শিখে নিতে হবে। পাশাপাশি ইসলামের সোনালি যুগের মনীষীরা কিভাবে রমজান কাটাতেন সে বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। যেকোনো কাজই আরম্ভ করার আগে সে কাজটি সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিতে হয়। অন্যথায় কাজটি সফলভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হয় না। ৩. ক্ষমা এবং সাওয়াব লাভের জন্য দৃঢ়সংকল্প করা। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎ কর্মপরায়ণদের সাথে আছেন (আনকাবুত ৬৯)। ৪. পূর্ববর্তী রমজানের কোনো কাজা রোজা থাকলে সে রোজাগুলো রমজানের আগেই আদায় করে নেয়া। কারণ আম্মাজান আয়েশা রা: প্রতি বছর রমজানের রোজা-পরবর্তী বছর রমজানের পূর্বেই কাজা করে নিতেন বলে বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। ৫. শিরক এবং হিংসা থেকে নিজের অন্তরকে পবিত্র করে রবের সাধারণ ক্ষমার উপযুক্ততা সৃষ্টি করা। মহান আল্লাহ রমজানে বহুসংখ্যক মানুষকে ক্ষমা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি নসিব করেন। আল্লাহর সাধারণ ক্ষমা থেকে হিংসুক ও মুশরিকরা বঞ্চিত থাকে। এ মর্মে বিভিন্ন হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং রমজানকে স্বাগত জানানোর আগে নিজ অন্তরকে যে কারো প্রতি হিংসাবিদ্বেষ থেকে পরিপূর্ণরূপে পরিচ্ছন্ন করে নেয়া এবং সব ধরনের শিরক থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়া বাঞ্ছনীয়। ৬. সামাজিক যোগাযোগেরমাধ্যম ও অনলাইনে যেন সময় অপচয় না হয় সেজন্য আগে থেকে পরিকল্পনা করে নেয়া। প্রয়োজনে অনলাইনের জন্য সময় নির্ধারণ করে নেয়া যেতে পারে। ৭. পূর্বের রমজানের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো এ বছর যেন পুনরায় না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা। ৮. শাবান মাস থেকেই রমজানের ইবাত-বন্দেগির অনুশীলন শুরু করা। রাসূলুল্লাহ সা: শাবান মাসে বেশি নফল রোজা রাখতেন। এর যে কয়েকটি কারণ বর্ণিত হয়েছে এর মধ্যে একটি কারণ এটাও যে, রমজানের ইবাদতে নিজেকে অভ্যস্ত করে নেয়া। কোনো কাজই হঠাৎ শুরু করা যতটা কঠিন, আগে থেকে শুরু করা তার চেয়ে অনেক বেশি সহজ ও ফলপ্রসূ হয়। ৯. রমজানের জন্য রুটিন তৈরি করে নেয়া। রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত মূল্যবান। একটি মুহূর্তও যেন নষ্ট না হয় সেজন্য ২৪ ঘণ্টার রুটিন করে নেয়া যেতে পারে। ১০. চাঁদ দেখার জন্য চেষ্টা করা। শাবানের ২৯তম দিনে চাঁদ দেখার চেষ্টা করা সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখবে এবং চাঁদ দেখে ঈদ করবে।’ কেউ যদি চাঁদ দেখার চেষ্টা করেন এবং চাঁদ দেখতে নাও পারেন তবুও তিনি সওয়াব পাবেন। ১১. রমজানে আমল ও ইবাদতের জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তাউফিক চাওয়া। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভের তাউফিক দান করুন। আমিন।