প্রচ্ছদ ধর্ম কোরবানির আহকাম ও মাসায়েল

কোরবানির আহকাম ও মাসায়েল

0
মুফতি জাকারিয়া মাসউদ: কোরবানি হলো মুসলিমদের একটি ইবাদত, যা প্রতি বছর বিত্তববানদের ওপর আরোপিত হয় নির্দিষ্ট সময়ে। এই ইবাদাতের মাধ্যমে মুসলিম মহান আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করে থাকেন।
কেরবানি যাদের ওপর ওয়াজিব :প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যিনি ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে (সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের অতিরিক্ত) নিসাব পরিমাণ সম্পদের (সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ তোলা রুপা কিংবা তার সমমূল্যের কোনো জিনিসের বা নগদ অর্থের) মালিক হবেন, আর তার এই পরিমাণ ঋণ না থাকে, যা পরিশোধ করলে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থেকে কমে যাবে, এমন ব্যক্তির ওপর কোরবানি ওয়াজিব। জাকাত ও কোরবানির নিসাবের মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। জাকাতের নিসাবের মালিক সারা বছর থাকতে হয় আর কোরবানির নিসাবে কোরবানির এই তিন দিনের মধ্যে মালিক হলেই তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত বলতে, যে সমস্ত বস্তু ইজ্জত-সম্মান ও জীবন রক্ষার্থে অপরিহার্য এমন পরিমাণ সম্পদের অতিরিক্ত, তাকেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত বলা হয়। টাকাপয়সা, সোনা-রুপা, অলংকার। বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যাবসায়িক পণ্য, অপ্রয়োজনীয় সব আসবাবপত্র, যেমন বড় বড় ডেগ, উন্নতমানের বিছানা, গদি, শামিয়ানা ইত্যাদি। এসবের মূল্য কোরবানির নিসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া, ৫/২৯২)
কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য সামর্থ্যবান হওয়া শর্ত :আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদের মাঠের কাছেও না আসে। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর ৩১২৩।কোরবানির পশুতে আকিকার হুকুম :কোরবানি ও আকিকা একই ধরনের ইবাদত এবং এ দুটি একসঙ্গে একই পশু দ্বারা জায়েজ হবে। ফতোয়ায়ে হিন্দিয়ার মধ্যে বিষয়টি স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে, যদি সবাই কোরবানির নিয়ত করে, তাহলে কোরবানি সবার পক্ষ থেকেই যথেষ্ট হয়ে যায়। এমনিভাবে কেউ যদি তার অতীতে ভূমিষ্ঠ সন্তানের আকিকা করতে চায় তাও সহীহ হবে। (ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩০৪)
গরু বা উট অথবা এ ধরনের পশুতে সাত শরিকে কোরবানি করার হুকুম : সাহাবায়ে কেরাম রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাত ভাগে কোরবানি করেছেন। হজরত জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে হজ সমাপন করি। আমরা সাত শরিকে একটি করে উট বা গরু কোরবানি করেছি। সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ৩০৭৮।
সাত জনের কম শরিক হওয়ার বিধান :গরু বা এ ধরনের বড় পশুতে ১ থেকে নিয়ে সাতজন পর্যন্ত শরিক হতে পারেন। তাতে সাতের কমে যে কোনো সংখ্যা গ্রহণযোগ্য হবে। জোড়-বিজোড় বা কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা মানার প্রয়োজন নেই। মালিকুল ওলামা আল্লামা কাসানি রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন :একটি উট বা গরুতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা যদি সাতের কম হয়, যেমন—দুই জন অথবা তিন জন অথবা চার জন অথবা পাঁচ জন কিংবা ছয় জন একটি উট অথবা গরুতে অংশগ্রহণ করে, তবে তা জায়েজ হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। দুই, তিন, চার, পাঁচ অথবা ছয় জন শরিক হয়ে কুরবানী করলে তা অবশ্যই বৈধ হবে। অর্থাত্, সর্বোচ্চ সংখ্যায় সাত জন বোঝানো হয়েছে। সাত জন পর্যন্ত শরিক হওয়া যাবে, সাত জনই হতে হবে এমনটি নয়।
লেখক: প্রধান মুফতি, কাশফুল উলুম নেছারিয়া মাদ্রাসা কম্প্লেক্স, নেছারিবাদ ও খতিব, চকসিংড়া উত্তরপাড়া জামে মসজিদ, সিংড়া, নাটোর