প্রচ্ছদ ভ্রমণ স্বচ্ছ নদ আর সবুজ পাহাড়

স্বচ্ছ নদ আর সবুজ পাহাড়

0

মোছাব্বের হোসেন:

হেমন্তের এ সময়টায় সিলেটের রূপ নাকি একদম অন্য রকম। লোভ দেখাচ্ছিলেন সিলেটবাসী বন্ধুরা। এ মাসের শুরুতে তাই বাসের টিকিট কেটেই ফেললাম। সঙ্গী স্ত্রী আঁখি। ভোরে সিলেটে পৌঁছালাম। সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আমার বন্ধু সোহাগ। তাঁর স্ত্রী লিসাও আমার স্কুলের বন্ধু। তাঁদের সঙ্গী আরও কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাঁদের মধ্যে আরাফাত যেন একটু বেশিই ভ্রমণপিপাসু! তিনিই ঠিক করে দিলেন ভোলাগঞ্জ যাওয়ার বিষয়টি। আগেও কয়েকবার সেখানে গেছেন বলে গাইডের ভূমিকাতেও তিনি। তবে সবাইকে সাবধান করলেন, যাওয়ার রাস্তা দেখে যেন ভড়কে না যাই!
সকালে হালকা শীতের আবহ। মিষ্টি রোদ। পরিষ্কার ঝকঝকে আকাশ। মৃদু বাতাস। সব মিলে আবহাওয়াও চমৎকার! সিলেট শহর থেকে দুটি অটোরিকশায় করে আমরা ভোলাগঞ্জ থেকে রওনা দিলাম বেলা ১১টায়। কথার প্রমাণ মিলল খানিক সময় বাদেই। এবড়োখেবড়ো আর ধুলাময় অনেকটা পথ। কিন্তু পথ যত এগোতে থাকে, নীল আকাশে পাহাড়ের রেখা ততই ফুটে উঠতে থাকে। রাস্তার দুই ধারেই খাল-বিলের পানি কমতে শুরু করেছে। অনেকেই মাছ ধরছেন।
প্রায় দুই ঘণ্টার রাস্তা। অটোরিকশা এসে থামে ভোলাগঞ্জ বাজারে। সামনেই দেখা যাচ্ছে মস্ত খোলা আকাশের নিচে সবুজ পাহাড়। সবারই পেটে ক্ষুধা! বাজারে এক দোকানে জানতে চাইলাম, খাবার কী কী আছে? দোকানদার জানালেন, বাইম মাছ প্রতি প্লেট ৪০ টাকা। সঙ্গে ভাত ফ্রি! আবার দেশি মুরগি প্রতি পিস ৫০ টাকা। এর সঙ্গেও ভাতের দাম দিতে হবে না। খাওয়ার পর্ব তো শেষ হলো। এবার পাহাড় আর নদীর কাছাকাছি যেতে হবে।
ভোলাগঞ্জের ধলাই নদ থেকে পাথর তোলা হচ্ছে শত শত নৌকায়। এখান থেকেই ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকায় উঠে বসলাম আমরা। শান্ত-স্নিগ্ধ আবহ। মানুষের বেশি আনাগোনা নেই। বেশ নিরিবিলি পরিবেশ। নদের পানি একদম স্বচ্ছ। ভেতরে যে ছোট ছোট মাছ, শেওলা ও পাথর ছোটাছুটি করছে, তা দেখে অ্যাকুয়ারিয়ামের মতোই মনে হয়। সবার পথের ক্লান্তি যেন উবে গেল। পানি খুব গভীর নয়। স্থানীয় মানুষেরা জানান, পাহাড়ের কোল থেকে নেমে আসা কোনো পাহাড়ি ঝরনার পানি এগুলো। যে যার মতো শীতল পানিতে নেমে পড়লাম। পেছনে যে বিশাল বিশাল পাহাড় দেখা যাচ্ছে, তা ভারতীয় সীমান্তে পড়েছে। পাহাড়ের বুকে ভারতের লোকালয় দেখা যায়। ঘরবাড়ি, মানুষের বিচরণ—সবই দেখা যাচ্ছে। কেবল সেখানে যাওয়া যাচ্ছে না। তাই পানিতে নেমেই পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে হলো। দুই ঘণ্টা সেখানে ইচ্ছামতো ভিজলেন সবাই। ডুব দেওয়া আর সাঁতার কাটার জন্য এর চেয়ে নিরাপদ আর কী হতে পারে।

হারুং–হুরুং গুহার পথেহারুং-হুরুং গুহা
ভোলাগঞ্জ ভ্রমণের পরদিনই ফেরার সময় আরাফাত বলে উঠলেন, মালিনীছড়া চা-বাগানের ভেতর একটি গুহা আছে, যাবেন নাকি? তাঁর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে সোহাগ বললেন, তাহলে কাল সকালেই। মালিনীছড়া চা-বাগানের ভেতরে শীতের সকালটা যে কী চমৎকার! একদিকে মিষ্টি রোদ উঠছে, অন্যদিকে চা-পাতা থেকে শিশির পড়ে যাচ্ছে। সবুজ সতেজ চা-বাগানে টিলার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া পানির প্রবাহ। উঁচু টিলার ওপর রাবারবাগান। পথে পথে রাবারের রস আর চা-পাতা সংগ্রহের দৃশ্য। ঘণ্টা খানেক হাঁটার পর আমরা একটি নির্জন পথ ধরে এগোতে থাকলাম। টিলার পাশ দিয়ে অনেকটা পাহাড়ি রাস্তার মতো। ধীরে ধীরে উঁচুতে উঠে যাচ্ছি আমরা।
আরও ঘণ্টা খানেক হাঁটার পর দেখা মিলল হারুং-হুরুং গুহার। দুটি মুখ। একটি মুখ ছোট আর কিছুদূর গিয়ে শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু অপর মুখ দিয়ে অনেক দূরে যাওয়া যায়। সঙ্গে টর্চলাইট নেই। মুঠোফোনের আলোই ভরসা। কিছুদূর তো যাওয়াই যায়। ছোট ছোট বাদুড় চোখে পড়ে। গুহার ভেতরে দিনের বেলাতেই মনে হয় এখন অনেক রাত!
আর বেশিদূর যাওয়ার সাহস পেলাম না। এবারের অভিযান এখানেই শেষ।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সিলেটে বাসে বা ট্রেনে যেতে পারেন। সিলেট শহর থেকে ভোলাগঞ্জে অটোরিকশা যায় জনপ্রতি ১২০ টাকা করে। ভোলগঞ্জে নেমে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় নৌকা ভাড়া করে দেখতে পারেন পাহাড় আর নদীর মিতালি। আর মালিনীছড়া চা-বাগান শহরের সিলেট স্টেডিয়ামের পাশে। তবে এই বাগানে ঢোকার আগে কর্তৃপক্ষকে বলে রাখা ভালো। এতে কোনো বিপদের আশঙ্কা থাকবে না। তাদের কর্মচারীরাই আপনার সঙ্গে যাবেন, গুহা দেখিয়ে দেবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here