প্রচ্ছদ জীবনযাপন “আমি ধন্য হয়েছি ওগো ধন্য, তোমারই প্রেমেরই জন্য “

“আমি ধন্য হয়েছি ওগো ধন্য, তোমারই প্রেমেরই জন্য “

0
নাজ নাঈম: কলেজ জীবনে প্রতিসপ্তাহে ছায়াছন্দ অনুষ্ঠানের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতাম কখন শুনব রোমান্সে ভরা প্রেমের গানগুলো । একটি ফিল্মে নায়ক নায়িকার এই দৃশ্যগুলো অত্যন্ত যত্ন আর আবেগ দিয়ে চিত্রায়িত হয় । গানগুলো যখন শুনতাম মনটা উড়ে যেতো কোন এক অদৃশ্য প্রেমিকের সাথে । আসলে প্রতিটা মানুষ চায় প্রেমিক বা প্রেয়সীর সাথে ঘর করতে ; কিন্তু যেন Life is a tragedy.  বেশীর ভাগ মানুষ ঘর বাধে , সন্তান হয় , সন্তানরা বড় হয় কিন্তু যেন তার প্রেমিকের সাথে কখনও ঘর করা হয়ে উঠে না ।
আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তখন আমার প্রিয় বান্ধবীর বিয়ে হয় । বিয়ের দুই বৎসর পর তাকে জিজ্ঞেস বিবাহিত এই জীবনে কেমন লাগছে ? সে বলল চলছে , কিন্তু ঐ যে প্রেম ,কখনও ব্যাক্ত আবার কখনও না বলা কথার শিহরণ একটা অদ্ভুত নিবিড় বাসনা, মাতাল করা অনুভব যাকে আমরা বলি প্রেম সেটা যেন নেই , সে ভাল কিন্তু ঐ প্রেম আবেগটা যেন নেই ।
আমার প্রতিবেশী, চার বাচ্চার মা . তিনি একদিন আক্ষেপ করে বললেন “আমার স্বামীর সাথে আমার প্রণয়ের সম্পর্ক নেই ।” আমি বললাম তোমার কথা আমি কিভাবে বিশ্বাস করব?  একটা নয় চারটা সন্তান তোমার বড় হচ্ছে । আমি পরে আর গভীরভাবে তার কথা চিন্তা করিনি । অনেক পুরুষের ও তেমনি আক্ষেপ তার স্ত্রী শুধু একজন বৈবাহিক চুক্তিবদ্ধ জীবনসঙ্গী , প্রেমিকা নন । আসলেই দুজন মানুষের মাঝে বিয়ে হয়ে গেলেই যে প্রেম হয়ে যাবে এটা ভুল । কিন্তু তারপরও একজন সৎ জীবনসঙ্গী ইচ্ছে করলে পারেন জীবনটাকে ছবির মত রোমান্চকর করে তুলতে । আসলে আমরা যখন বিবাহের মাধ্যমে  সঙ্গী পাই তখন ধরে নেই উনার সাথে প্রেম করলেও উনি আমার , প্রেম না করলেও উনাকে আমার সাথে থাকতে হবে । উনি আর যাবেন কোথায় ।

আমাদের কোন কোন বাঙালি দম্পতিরা সবার সামনে হাত ধরে একটা ছবি তুলতেও অনাগ্রহ দেখান। অনেক মহিলাকে দেখা যায় যখন কোথাও যাবেন খুব সুন্দর পরিপাটি হয়ে যাবেন কিন্তু স্বামীর পাশে আউলা বাউলা চুল আর লম্বা নাইটি পরে সারাক্ষণ ঘুরে বেড়াবেন । স্বামীর ও তো ইচ্ছে করতে পারে সুন্দর পরিপাটি একটা মেয়ের সাথে একটু সময় পাশাপাশি বসতে , খুনসুটি করতে । আবার কিছু কিছু স্বামীদের ও দেখা যায় দুনিয়ার অন্য মানুষদের সাথে হাসিমুখে কথা বলছেন কিন্তু শুধু বউয়ের সাথে কথা বলার সময় মুখে কোন হাসি নেই। অথচ দুজন পরস্পরের প্রতি দায়িত্বশীল এবং স্বামী বউকে ভালবাসেন , স্ত্রী ও স্বামীকে ভালবাসেন , কিন্তু এটাকে উনারা হাসিখুশী দিয়ে ফুটিয়ে তুলতে চান না ।
আমার ঘরে এক কর্মজীবি আত্মীয় মহিলা আসেন , কথা প্রসঙ্গে বললেন যেহেতু তিনি চাকুরী করেন তিনি নিজের আয় দিয়েই নিজের শখ পুরণ করতে পারেন কিন্তু তারপরও তিনি চান বার্থ ডে , ম্যারেজ এনিভারসরিতে তার স্বামী যেন তাকে কিছু উপহার দেন । বিশেষ দিনগুলো তিনি বিশেষভাবে উদযাপন করতে পছন্দ করেন কিন্তু স্বামী এগুলো পাত্তা দেন না । স্বামীর এই আবেগহীনকা তাকে কষ্ট দেয় ।
আমাদের বাঙালি সমাজে অনেক স্বামী স্ত্রী আসলে দু’জন দু’জনকে অনেক ভালবাসেন কিন্ত দেখা যায় এক পর্যায়ে আবেগ বহি;প্রকাশের কৃপণতায় এই সম্পর্কটা মরুভূমির বালুকণায় পরিণত হয় । পারিবারিক সামাজিক অন্য সম্পর্ক গুলোতে আর স্বামী স্ত্রীর দিনযাপনের সম্পর্কে অনেক ভিন্নতা আছে । আমাদের কোন কোন ঘরে মনে হয় স্বামী বাজার সরকার আর স্ত্রী ঘরের কেয়ারার । সারাদিনে দেখা যায় প্রয়োজন ছাড়া তাদের মধ্যে ভাব বিনিময় হচ্ছে না । কাজ থেকে ফিরে এসে ও দেখা যায় দু’জন পাশাপাশি বসলেও যার যার অ্যাপস , Device নিয়ে ব্যাস্ত , কোন কোয়ালিটি কমিউনিকেশন হচ্ছে না । দেখবেন বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে বাজারের লিষ্ট , বাচ্চাদের কে স্কুলে নিবেন , কে তুলবেন ,এসব জরুরী নির্দেশ ছাড়া দম্পতিদের মোবাইলে কোন রোমান্টিক কথার আদান প্রদান নেই । এই প্রসঙ্গে একটি কৌতুক মনে পড়ল ।
কৌতুকটি FB থেকে : একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে বিবাহিত মহিলাদের বলা হল তাদের স্বামীদের I love you ম্যাসেজটা লিখার জন্য । স্বামীদের পক্ষ থেকে যার স্বামীর ফোন থেকে সুন্দর রিপ্লাই আসবে তাকে পুরস্কার দেয়া হবে । দেখা গেল প্রথম দুজনের কোন উত্তরই আসেনি । একজনের স্বামী লিখলেন তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেল , আর একজনের স্বামী লিখলেন, কি মতলব , শাড়ী কিনবে তো পয়সা দিতে হবে, তাইতো ; আর একজনের স্বামী লিখলেন গাড়ী আবার ধাক্কা লাগিয়েছো? আর সর্বশেষ জনের স্বামী লিখলেন, কে? আয়োজকরা সর্বশেষজনকেই পুরস্কার দিলেন । আসলে এটাই বাস্তবতা , I love you , I miss you, my sweetheart এই ম্যসেজগুলো স্বামী স্ত্রীর পরস্পরের দেয়া ম্যাসেজ হয়ে মোবাইলে থাকার কথা ছিল কিন্তু বাস্তবে দেখবেন এই মধুর বাক্যগুলো যাচ্ছে থার্ডপারসনদের ম্যাসেজে ।
মানুষ শুধু খেয়ে পরলেই চলমান সময়কে উপভোগ্য করতে পারে না , জীবনকে শিল্পময় করতে কবিতা , গানের যেমন প্রয়োজন , জীবনসংগীর সাথে জীবনকে প্রেমপূর্ণ করতে ও কিছু রোমান্টিক অনুষঙ্গের দরকার হয় । এগুলোর জন্য যে অঢেল পয়সা লাগে , তা নয় কিন্তু ।
মোড়ের দোকানে এককাপ গরম কফি , অথবা নদীতীরে সূর্যাস্ত দেখা অথবা একসাথে কোথাও বেড়াতে যাওয়া অথবা একটু সারপ্রাইজ করা এই তো সামান্য কিছু উশৃংখলতা , প্রতিদিনের একঘেয়ে জীবনে একটুখানি রোমান্সের রং মেশানো , এই আর কি ।আমার মনে আছে একটা মেলায় যাব , আমি আমার স্বামীকে বলেছিলাম আমার সাথে যেতে , তিনি যাননি । আমি খুব মন খারাপ করে মেলায় গিয়েছিলাম । একঘন্টা পর আমি মেলার স্টলে চা খাচ্ছিলাম , হঠাৎ দেখি আমার কাঁধে এক পুরুষের হাত , চমকে দেখি আমার স্বামী । বললেন অফিসের কাজ ফেলে শুধু তোমার অনুরোধ আসলাম । আমার তখন মনে হয়েছিল সে শুধু আমার স্বামী নয় সেই আমার কলেজ জীবনের ছায়াছন্দ মুহুর্তের অদৃশ্য প্রেমিক ।