প্রচ্ছদ ফিচার উৎসবের রঙে

উৎসবের রঙে

0
নওশীন শর্মিলী: বর্ষবরণে নিজেকে নতুন রূপে সাজাতে শাড়িই নারীর প্রথম পছন্দ। উৎসবের এই দিনে বাঙালি ঐতিহ্য ও সংস্কৃৃতি যেন পুরোপুরি ফুটিয়ে তুলতে পারে একমাত্র শাড়ি। তবে গরমের এই সময়ে আপনার পছন্দের শাড়িটি যেন আরামদায়ক হয়, সেদিকেও নজর দিতে হবে।
বৈশাখ এলেই বাঙালি নারীর গায়ে ওঠে পাটভাঙা তাঁতের শাড়ি। সেই শাড়িতে লাল-সাদার সীমাবদ্ধতায় থাকতে রাজি নয় এখন কেউই। লাল ও সাদা তো থাকবেই, সঙ্গে থাকতে হবে অন্যান্য রং। কিংবা অন্য কোনো রঙের শাড়িতে সেজে কপালের টিপ আর হাতের চুড়িটা সবাই লাল পরবেন। অথবা শাড়িতে চাই কোনো বাঙালি মোটিফ। গরম, অনভ্যস্ততার কারণে শাড়িতে স্বস্তি বোধ করেন না অনেকেই। গরমে সিনথেটিক কাপড় এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। যেহেতু দিনের অনেকটা সময় শাড়ি পরে থাকতে হবে, সে ক্ষেত্রে সুতি কিংবা সিল্কের শাড়িতেই আরাম পাওয়া যাবে। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি বৈশাখের শাড়ি হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। তবে তাঁতে বোনা সুতি জামদানি শাড়ি কিংবা তাঁতে বোনা সুতি শাড়ির ওপর সুতার কাজ ও ব্লক বাটিকে সুতির শাড়িগুলো বৈশাখের পোশাকে তুলে ধরে ভিন্ন রকম আমেজ। এছাড়া সুতি কাপড়ের শাড়ির ওপর স্ক্রিন ও এমব্রয়ডারির কাজের শাড়িগুলোও আপনি বেছে নিতে পারেন। শাড়ি বাছাইয়ের পাশাপাশি পছন্দের ব্লাউজ তৈরিটাও সমান গুরুত্ব পায় বর্ষবরণে। শাড়িটা সাদামাটা হোক কিংবা জমকালো, এখন ব্লাউজটা হওয়া চাই ভিন্ন ধাঁচের।
ফ্যাশন-সচেতন সব নারীই এখন মনোযোগ দিচ্ছেন বৈচিত্র্যময় ও সুন্দর ব্লাউজের দিকে। এখনকার ট্রেন্ডটা হলো শাড়ির সঙ্গে কন্ট্রাস্ট ব্লাউজ পরার। সুতি বা তাঁতের শাড়ি শাড়িগুলোর সঙ্গে কাঁথাস্টিচ, টাইডাই, প্যাচওয়ার্কের কাজ করা ব্লাউজ পরা যেতে পারে। গামছা কাপড়ের ব্লাউজও ভালো লাগবে। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে পাইপিং লাগানো যেতে পারে। রাতে দাওয়াত কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে অ্যান্ডি সিল্ক, ধুপিয়ান বা কাতান কাপড়ে লেইস বসানো অথবা নকশা করা ব্লাউজ পরা যেতে পারে। এই সময়ে হাই নেক, বোট নেক, পিছনে কাটা, সামনে ও পিছনে ‘ভি’ আকৃতির কাটের ব্লাউজের চল দেখা যাচ্ছে। স্টিভলেস ও কনুই পর্যন্ত হাতার ব্লাউজের সঙ্গে ফুলহাতার ব্লাউজও হবে ফ্যাশনেবল। বৈশাখ এলে তো লাল-সাদার ছড়াছড়ি। তপ্ত রোদে সাদা রঙের পোশাক তাপ শোষণ করে। আর তাই সবার নজর থাকে সাদার দিকে। বাঙালির এই প্রাণের উত্সবে ভোর বেলা যেমন আপনি শামিল হতে পারেন, তেমনি দুপুরের রোদ খানিকটা কমে এলে আপনি ছুটে যেতে পারেন উত্সবের কেন্দ্রগুলোতে এই আয়োজনের একজন হয়ে। শুধু এই দিনটিতে নয়; বরং প্রাণের টানে আর নিজের ঐতিহ্যের গর্বে নিজস্ব চেতনায় আপনি বাঙালিয়ানাকে ছড়িয়ে দিতে পারেন আপন ঐশ্বর্যে।
এ বিষয়ে ফ্যাশন হাউস অঞ্জন’স-এর শীর্ষ নির্বাহী শাহীন আহম্মেদ বলেন, ‘সুতি কাপড়ের শাড়ির ওপর স্ক্রিন ও এমব্রডারির কাজ বেছে নেওয়া যেতে পারে। বৈশাখের সাজ মানেই লাল পাড়ের সাদা শাড়ি। তবে সময়ের সঙ্গে এসেছে নতুনত্ব। এখন আর লাল-সাদায় সীমাবদ্ধ নেই বৈশাখ। ফ্যাশন সচেতনরা বেছে নিচ্ছেন পোশাকে বিভিন্ন রং। হালকা গোলাপি, কমলা, মেরুন কিংবা নীল রঙের সুতি শাড়ির মধ্য দিয়ে নিজেকে সাজিয়ে নিতে পারেন বৈশাখের সকালে। আমরা এবার লাল-সাদায় উপজীব্য অন্যান্য উজ্জ্বল সব রঙে শীতল পাটি, পুরোনো স্থাপত্য শিল্প থেকে নেওয়া নকশা, ফুলেল প্রিন্ট, কাঁথা স্টিচ, মঙ্গল শোভা যাত্রা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে বৈশাখী থিমের মূল উপস্থাপনায় পোশাক তৈরি করেছি। ডিজাইনারদের মুন্সিয়ানায় পোশাকের ক্যানভাস রাঙানো হয়েছে স্ক্রিন প্রিন্ট, এমব্রয়ডারি, ব্লক প্রিন্টে। শাড়িসহ কামিজ, লং ফতুয়া, পাঞ্জাবি, শার্ট সবই থাকছে অ্যান্ডি কটন, লিনেন কটন, ভয়েল ও সুতি কাপড়ে।’
মডেল : আঁখি আফরোজ
পোশাক : অঞ্জন’স
ছবি : বিশ্বজিত্ সরকার

কৃতজ্ঞতায়:ইত্তেফাক