প্রচ্ছদ কবিতা কবি আবু মকসুদের কবিতা

কবি আবু মকসুদের কবিতা

0

সাংসারিক কবি…

লোকটা গৃহস্থালিতে সুনিপুণ
আলু ক্ষেত্রের আগাছা নিধন, নিম পাতার
ঔষধি গুণ তার জানা
লাঙ্গলের ফলা কতটুকু
দাবানো প্রয়োজন, পরিমিত পানির প্রবাহে
ফসলি মাঠ কতটুকু উর্বর হয়
ঠিক জানে সে, প্রসূতি স্ত্রীর পরিচর্যা
অন্তে গোয়ালের গোবর সংরক্ষণ
তার নিত্য দিনের কাজ
স্কুলগামী সন্তানের জুতার ফিতা
বৃদ্ধ বাবার আয়েসি হুক্কা
সঠিক সময়ে সামনে এগিয়ে দেয়
ভোরের প্রান্ত শেষে নিজ কর্মের জন্য
প্রস্তুত হতে হতে সংসারী মন
নিজেকে প্রকাশে হঠাৎ ব্যাকুল হলে,
কলমের নিবে অক্ষর
উদগিরন লোকটাকে মত্ততা দেয়
লোকটা কবিও বটে, কবিতাক্রান্ত
হওয়ায় কর্মের দেরী
তার ধাতে নেই… বরং
ভাবুকতায় ভাসা স্থগিত রেখে সংসারধর্ম
পালনকে লোকটা অগ্রাধিকার দেয়…
লোকটা প্রকৃত কবি, সাংসারিক কবিতায়
প্রতিদিন নিজেকে ঝালাই করে
মাছের বাজারে লব্ধ অভিজ্ঞতা
কবিতায় রূপান্তরিত হলে
কালজয়ী শিল্প হতে পারে বলে
আমাদের ধারনা, লোকটা
মাছের, আলুর, নিমের, পুত্রের
ফিতার, বাবার, হুক্কার, লাঙ্গলের
প্রসূতি স্ত্রীর কবিতা লেখে
অর্থাৎ আমাদের প্রতিদিন যাপনের
কবিতা লেখে, লোকটা আমাদের কবি
কবিতার জন্য তাকে ধ্যানে বসতে হয় না
গরুর গোয়ালেই কবিতা পেয়ে যায়,
ফসলি মাঠ অনায়াসেই কবিতায় ধরা দেয়…
লোকটা সময়ের কবি, সংসারের কবি
সংসার কর্ম অন্তে ঘুমের বিছানায়
উৎকীর্ণ লোকটা আমাদের কালের শ্রেষ্ঠ কবি..

আগুন উৎসব

এক শীতের রাতে শীত পাখি উড়াল দিলো;
উষ্ণ প্রদেশে চলছে আগুন পোহানো উৎসব
আগুন পোহানো রাতে পাখির কিচিরমিচির
পথিকের মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটালে, পান্থ
মখমলি সার্টের বোতাম খুলে শীতের মিতালি
গ্রহণে আগ্রহী হয়ে উঠে, উষ্ণ প্রদেশের আগুন
মানব সমীপে পৌঁছাতে পেরেছে প্রদাহী আহ্বান;
উষ্ণ হাতের প্রয়োজন দিকে দিকে, উঠো প্রশস্ত
হৃদয়ের মানুষ, শীতে কম্পমান কিশোরীর মাথায়
আঙুলের পরশে পৌঁছে দাও মানবিক বোধ;
কিশোরী জেনে যাক আগুন পোহানো শেষে
নিরাপদ আবাসে ফিরে যাবে উষ্ণ হৃদয় মানুষ…

স্পর্ধিত পুরুষ

নিয়তির সাথে যুগল যুদ্ধে
তাকে পরাস্ত করেছি, বিভ্রান্তির চোরাবালি
অক্টোপাসের অষ্ট বাহু কিছুই দমাতে পারেনি
অর্জুন চোখে অব্যর্থ ছিল নিশানা
পাথরের পাহাড়ে দুধের নহর খুঁজতে
পূর্ব পুরুষদের পথ অবলম্বন প্ররোচনা
দিলে নিজস্ব ছাপ রাখার কাঙ্ক্ষা
ভিন্ন পথের সন্ধানে পাঠায়
জয়ের জন্য জীবনের বাজী নতুন নয়
আবহমান কালে ঘটনার গুরুত্ব থাকলেও
সমকালে রক্তের বদলে মুক্তিই
কাম্য, অধিকার আদায়ের জন্য
অঘুম রাত্রি অনায়াসে পাড়ি দেয়া
যায়। সূর্য করায়ত্ত বিদ্যা অনেকেই জানে না
সমুদ্রের ঢেউয়ে সূর্যকে বেধে দিতে পারাকেই
স্পর্ধা ভাবি। এমন স্পর্ধা তাঁর ছিল
মন্থনের সমুদ্রে তাঁকে পেয়েছি
বিশালতায় পর্বতকে ক্ষুদ্র হতে দেখেছি
ব্যতিক্রমী কিছুর জন্য গাছের পাতারাও
ব্যকুল থাকে, সীমান্ত পাড়ি দেয়া
বীর যখন বীর দর্পে ফিরে পৃথিবীর
তাবৎ বীর তাঁকে ছুঁয়ার জন্য প্রতিযোগিতায়
নামে, প্রান্তরে এসব বীর কালেভদ্রে
একবার আসে। বৃষ্টির জন্য প্রার্থনার পরে
অঝোর ধারা বুকের অন্ধিসন্ধি ভিজিয়ে
দিলে প্রকৃতি বুজে নেয় নত হওয়ার সময় এখনই
তাঁর কাছে নত হতে লজ্জা নেই বরং
তাঁর পায়ের ধূলায় গৌরব লেগে আছে
তিনি একবার এসে দাঁড়িয়েছিলেন আমাদের প্রান্তরে
তাঁকে চির জনমের মতো হৃদয়ে সমাহিত করেছি…