ডা: রুমানা চৌধুরী: আমাদের প্রতিদিনের জীবনে নানা রকম ঘটনার চাপে পড়ে মন খারাপ হয়ে যায়। ছেলে বা মেয়ে অসুস্থ কিংবা ব্যবসায়ে বিপর্যয়ের মতো ঘটনা আমাদের মানসিক কষ্ট বাড়িয়ে দেয়। মনের এরকম অবস্থাকে আমরা বলি বিষণœতা বা ডিপ্রেশন। এরকম অবস্থা অনেকে কাটিয়ে উঠতে পারে আবার কেউ পারে না। যারা পারে না, তারা দিনের পর দিন মানসিক কষ্টে ভোগে, দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হয় এবং একটা স্থবির জীবন যাপনে বাধ্য হয়। তখন এটি একটি রোগেরপর্যায়ে দাঁড়িয়ে যায়। এর জন্য চিকিৎসা প্রয়োজন।
ডিপ্রেশন কাদের হয়? যেকোনো দেশের জনসংখ্যার প্রায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ লোক বিষণœতা রোগে ভুগে থাকে। মেয়েদের এ রোগে ভোগার প্রবণতা পুরুষের চেয়ে দ্বিগুণ। বেকার ও নিঃস্ব জীবন যাপনকারীরাও (বৃদ্ধ, স্বামী পরিত্যক্ত স্ত্রী) এ রোগে বেশি ভুগে থাকেন। যারা বিভিন্ন ধরনের নেশা করে তাদের মধ্যেও ডিপ্রেশনের হার বেশি।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৮ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে সাধারণত এ রোগ বেশি হয়। আগে একটি ধারণা ছিল, সাধারণত বয়স্কদের এ রোগ হয়। কিন্তু এ ধারণা বোধ হয় এখন আর টিকছে না। আধুনিক নাগরিক জীবনের চাপ সব হিসাব ওলট-পালট করে দিচ্ছে। ডিপ্রেশন কেন হয়? ১। জেনেটিক কারণ : পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনের মধ্যে ডিপ্রেশন থাকলে এই রোগ হতে পারে। ২। বায়োকেমিক্যাল কারণ : সাধারণত আমাদের ব্রেনের মধ্যে নানা রকম জৈব রাসায়নিক বস্তু সুষমভাবে থাকে। এগুলো ব্রেনে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে। যখন এসব রাসায়নিক বস্তুর ঘাটতি ঘটে, তখন ডিপ্রেশন হতে পারে। ৩। ব্যক্তিত্ব : বিশেষ ধরনের ব্যক্তিত্বের মধ্যে (উদ্বেগপ্রবণ, অল্পকিছুকে বড় মনে করা) এ রোগের পরিমাণ বেশি দেখা দেয়। ৪। মা-বাবাহীনতা : দেখা গেছে, যেসব শিশু কোনো কারণে মা-বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত অথবা মা-বাবার পারস্পরিক বিরোধ ও কোন্দলের মধ্যে বড় হয়েছে, তাদের মধ্যে পরবর্তীকালে ডিপ্রেশনের পরিমাণ বেশি।
যেসব ঘটনা ডিপ্রেশন বাড়িয়ে দেয় ১। অসুখী বিবাহ ২। কর্মস্থলের সমস্যা ৩। বাসস্থানের সমস্যা ৪। একাকিত্ব ডিপ্রেশনের লক্ষণ ১্ মনে অশান্তি, কষ্ট, মন খালি খালি লাগা ও দুশ্চিন্তাবোধ। ২। নেতিবাচক মনোভাব, সব কিছুতে হতাশা ও নিজের কোনো ভবিষ্যৎ নেই ভাবা। ৩। উৎসাহহীনতা। ৪। আনন্দদায়ক কাজে আনন্দ না থাকা। ৫। নিজেকে অপরাধী ভাবা। ৬। কাজকর্মে, চলাফেরায় ধীর হয়ে যাওয়া। ৭। মৃত্যুর চিন্তাভাবনা, আত্মহত্যার চিন্তাভাবনা (এমনকি অনেকে এ রোগে আত্মহত্যাও করে বসে)। ৮। মনোযোগহীনতা, বিরক্তি ভাব। ৯। আত্মবিশ্বাসের অভাব। ১০। স্মরণ শক্তির সমস্যা। ১১। সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা। ১২। শরীর ও মাথাব্যথা। ১৩। ঘুমের সমস্যা। ১৪। খাওয়ায় অরুচি। ১৫। সেক্স সম্বন্ধে উৎসাহ কমে যাওয়া।
ডিপ্রেশনের চিকিৎসা ১। বিষণ্নতা বিরোধী ওষুধ একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মনোচিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে খেতে হবে। ২। বিষণ্নতার ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক কারণ থাকলে তার সমাধান করতে হবে। ৩। সাইকোথেরাপি : রোগীর জীবন ও রোগ সম্বন্ধে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা দূর করতে হবে।