প্রচ্ছদ জীবনযাপন দাম্পত্য সম্পর্ক সুমধুর সেতুবন্ধন

দাম্পত্য সম্পর্ক সুমধুর সেতুবন্ধন

0
অনলাইন ডেক্স: এই পথ যদি না শেষ হয়… গানের কথার মতো প্রেমিক-প্রেমিকা পথ চলে একসঙ্গেই। হাতে হাত, চোখে চোখ রেখে দিন চলে যায়। বড় মধুর সেই দিনযাপন। আর এ সম্পর্কটা হয় প্রত্যাশার। অনেক মিষ্টি মধুর। মানুষ বদলায়, সংসার করতে এসে দেখা যায় ভালোবাসার সেই মানুষটির সঙ্গেই নানা তিক্ত সম্পর্ক তৈরি হয়। আবার কেউ কেউ সবকিছু ছাপিয়ে নিজেদের সুখী দেখতে চান, শান্তিতে জীবনযাপন করতে চান।
সেই কারণে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে মিষ্টি একটা সেতুবন্ধন তৈরি হয়। এ নিয়ে কথা বলেছেন, নানা পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীন লিখেছেন মৃন্ময়ী হাসান

‘একটু মানিয়ে চলা, দু’জন দু’জনকে বোঝা ও দু’জন দু’জনকে ভালোবাসা- এটুকুই দিতে পারে সুখময় দাম্পত্য জীবন; একটা মিষ্টি দাম্পত্য সম্পর্ক। দাম্পত্য সম্পর্কের ধরনটাই যেন এ রকম- কখনও আলো, কখনও আঁধার। তবে আজকের দম্পতিরা সত্যিই দিশেহারা। ঘরে-বাইরে জীবন ক্রমশ জটিল থেকে জটিলতার মধ্যে চলে যাচ্ছে।

ঘরের কাজকর্ম থেকে শুরু করে বাচ্চাদের লেখাপড়া পর্যন্ত। সবকিছুই যেন কঠিন ও অনিশ্চিত জীবনযাপন। স্বামী-স্ত্রী দু’জনই নিজেদের কর্মস্থলে সমস্যার পর সমস্যা মোকাবেলা করে ক্লান্ত। ঘরে ফিরে একটুও শান্তির অবকাশ নেই। ব্যক্তিত্ব আর আত্মমর্যাদার সংকট প্রবল আকার ধারণ করে। তবে দু’জনই পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও আন্তরিকতা নিয়ে চললে সম্পর্কটা সহজ হয়।’

সংসারে মূলত সব দায়িত্ব পালন করতে হয় একজন নারীকেই। এই একটি কারণে অনেক সময় একটু একটু করে সংসারে দেখা যায় তিক্ততা। সেই তিক্ততা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কেও হানা দেয় তার রেশ। ‘দাম্পত্য জীবনে দু’জনের একটু মানিয়ে চলাটাই সম্পর্ক সুন্দর করে তোলে ও সুখী হওয়া যায়। আবার মানিয়ে চলা শুধু দাম্পত্য সম্পর্ক নয়, সব সম্পর্ক সহজ-সুন্দর করে নিতে হয়। স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে বলা যায়, মেনে নেয়াটা যেন একতরফা না হয়।

কারণ আমরা দেখি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েরাই বেশি ত্যাগ করে। ভুল ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কেননা আজকের শিক্ষিত ও কর্মজীবী মেয়েদের জন্য দাম্পত্য জীবন একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এখানে তাকে একই সঙ্গে সুদক্ষ অফিস কর্মী, স্ত্রী, বন্ধু, সুচারু গৃহিণী, মা ইত্যাদি ভূমিকা পালন করতে হয়।

একইসঙ্গে সংসারের সব ঝামেলাও অনেক সময় এক হাতেই সামলাতে হয়। তাই ত্যাগের ক্ষেত্রে মানিয়ে চলার ক্ষেত্রটা যেন একজনের ঘাড়ে না চেপে যায় সেদিকটায় সচেতন হতে হবে। ছোটখাটো ও বড় সমস্যায় সমঝোতার মধ্যদিয়ে যদি দু’জন সুন্দর মানিয়ে চলেন তবে সম্পর্কটা অনেক ক্ষেত্রে সহজ হয়। মধুর হয় দাম্পত্য জীবন’ জানালেন ড.মাহবুবা নাসরীন।

জীবনসঙ্গী যদি সংসারের প্রতি ইতিবাচক থাকেন, তবে ত্যাগ-তিতিক্ষা, খিটিমিটি জড়িয়ে দাম্পত্য জীবন সুন্দর হয়। সবকিছুর মধ্যে ভুল ধরতে না যাওয়া, সব ব্যাপার নিয়ে কলহের ভাবনা থেকে দূরে থাকলে সম্পর্কটা সমস্যা হয় না, সন্তানরাও বেড়ে ওঠে সুন্দর মনোরম পরিবেশে। দাম্পত্য জীবনে কলহ অত্যন্ত স্বাভাবিক একটা বিষয়।

ভালোবাসা সমঝোতা-মমতার মতোই মতবিরোধ, মতপার্থক্য দাম্পত্য জীবনের একটি অঙ্গ। বিবাহিত জীবন কেবল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেই সীমাবদ্ধতা থাকে না। এতে জড়িত পরিবারের অন্যান্য সদস্য, সমাজ-সংস্কৃতি। স্বামী-স্ত্রী দু’জন স্বতন্ত্র মানসিকতার ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে ওঠা আলাদা মানুষ দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয় সাধন করে একটা সমঝোতায় পৌঁছে জীবনযাপন করতে চেষ্টা করেন। ওইখানে মানিয়ে চলাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভালোবাসা ও সম্পর্কে কোন সমস্যা সৃষ্টি হলে তর্কে জিততে যাওয়ার একটা প্রবণতা বা নিজের মতকে প্রাধান্য দেয়াটা এই দাম্পত্য জীবনের কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। দাম্পত্য জীবন সম্পর্ক যেসব কারণে তিক্ত হতে পারে তার মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ব্যস্ততা ও একে অপরকে পর্যাপ্ত সময় দিতে না পারা, সাংসারিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা, মানসিকতার পার্থক্য, তৃতীয় ব্যক্তিকে জড়িয়ে সন্দেহ। মন-মেজাজ তিক্ত থাকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি।

মার্কিন এক গবেষণায় বলা হয়, যারা ভালোবাসার সম্পর্কে জড়ায় তারা চমৎকার অনুভব করে এবং একইসঙ্গে মানসিক যন্ত্রণায়ও থাকে। আর এ ধরনের উত্থান-পতন থেকেই মানসিক ও শারীরিক চাপের কারণ হয়। একটি ভালো বিবাহিত সম্পর্ক ভালোবাসা দীর্ঘস্থায়ী করে, উপভোগ্য যৌন সম্পর্ক ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। সুখী হওয়ার জন্য পারিবারিক সম্পর্ক মজবুত হওয়ার ওপর নির্ভর করে, এরপর বিবেচনায় আসে টাকা আয়ের ব্যাপার। টাকা আপনাকে সবসময় সুখী করবে না কিন্তু একটি ভালো বিবাহিত সম্পর্কের সেই ক্ষমতা আছে। তো সেই ক্ষমতার রেশ ধরে হোক না আমাদের সম্পর্কগুলো বড় মধুর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here