২০০৬ সালে ভারতে এক নারী আইপিএস অফিসার হঠাৎ করেই গোটা দেশের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। তিনি কর্ণাটকের তৎকালীন বিজেপি বিধায়ক রেণুকাচার্যকে (বর্তমানে মন্ত্রী) প্রকাশ্যে সপাটে চড় মেরেছিলেন। যা তাকে পুলিশ মহলে ‘আয়রন লেডি’ নামে পরিচিতি এনে দেয়।
আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনার দিন বিধায়ক রেণুকাচার্য কংগ্রেস বিরোধী একটি প্রতিবাদ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। সে সময় পুলিশ বারবার তাদের রাস্তা ছাড়তে অনুরোধ করেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা রাজি হননি। এরপরই তাকে চড় মারেন সনিয়া নারং নামে ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তা। এমনকি গালিগালাজ করার অভিযোগে তাকে গ্রেফতারও করেছিলেন।
পাঞ্জাব প্রদেশের চণ্ডীগড়ের মেয়ে সনিয়ার আদর্শ তার বাবা এ এন নারং। যিনি পুলিশের ডেপুটি সুপার ছিলেন। সনিয়া জানান, বাবাকে আদর্শ হিসেবে মানেন এবং তাকে দেখেই আইপিএস হওয়ার ইচ্ছে জাগ্রত হয়।
পড়াশোনায় বরাবরই মেধাবী ছিলেন সনিয়া নারং। উচ্চ মাধ্যমিকে শীর্ষ স্থান পেয়ে পরে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সোশিয়োলজি থেকে স্নাতকে স্বর্ণপদক পান। ইউপিএসসির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন উচ্চ মাধ্যমিকের পর থেকেই।
২০০৪ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সেই শিক্ষানবীশ পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে কর্নাটকের গুলবর্গা জেলায় ক্যারিয়ার শুরু করেন সনিয়া। এর দুই বছর পরই ২০০৬ সালে ঘটনাটি ঘটে। তখন তিনি কর্নাটকের দেবাঙ্গেরের পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
এত অল্প বয়স বা কম অভিজ্ঞতাও তাকে সঠিক পদক্ষেপ নিতে দ্বিধাগ্রস্ত করতে পারেনি। ওই ঘটনার পর রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের একাংশ সনিয়ার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে। খোদ বিধায়ক রেণুকাচার্য তার বদলির চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সফল হননি।
এক্ষেত্রে সনিয়ার ভাষ্য, সততা এবং পরিশ্রম এই দুটি বিষয় প্রশাসনিক ক্ষেত্রে থাকলে আপনাকে কেউ আটকাতে পারবে না। আর এটা খুবই জরুরি।
২০১৩ সালে আরও একটি সাহসী কাণ্ড করে বসেন তিনি। কর্নাটকের তৎকালীন কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বসেন সনিয়া। ১৬ হাজার কোটি টাকার খনি কেলেঙ্কারিতে তার নাম জড়িয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেটির জবাব সর্বসমক্ষেই দেন তিনি।
সে সময় বেঙ্গালুরুর দক্ষিণ শাখার ডেপুটি কমিশনার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন সনিয়া। এই পদে বেঙ্গালুরুর ইতিহাসে তিনিই দ্বিতীয় কোনো নারী কর্মকর্তা। দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সাধারণত রাজনৈতিক পদাধিকারীর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে ঝামেলা মিটিয়ে নেন পুলিশকর্তারা। কিন্তু সনিয়া সেই পথে না হেঁটে প্রকাশ্যে একটি বিবৃতি জারি করেন।
সেখানে তিনি লেখেন, সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পেরেছি মুখ্যমন্ত্রী আমার বিরুদ্ধে খনি কেলেঙ্কারিতে অভিযোগ এনেছেন। যে দায় তিনি আমার ওপর চাপিয়েছেন তা সত্য নয়। কারণ, যে এলাকায় এ ঘটনা সেখানে আমি কখনো দায়িত্ব পালন করিনি। তাই আমার নাম আসার কোনো প্রশ্নই উঠে না। এরপরই অভিযোগের বিরুদ্ধে আইনি পথে লড়ার ঘোষণা দেন তিনি। যা মুখ্যমন্ত্রীকে অপ্রস্তুত করে তুলে।