মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব: অভাব-অনটনে ধৈর্য ধারণ করা রাসূলুল্লাহ সা:-এর মহান আদর্শ। রাসূলুল্লাহ সা:ও অভাব-অনটনের মধ্যে দিন গুজরান করতেন। মাসের পর মাস রাসূলের ঘরে আগুন জ্বলত না। রাসূল সা: দাওয়াতি কাজে দূর-দূরান্তে সফর করতেন। আর অভাব-অনটন তাঁর সফর সঙ্গী হতো। একবারের ঘটনা, রাসূলুল্লাহ সা: বর্ণনা করেন, ‘আমি আর বেলাল সফরে বের হয়েছি। একাধারে তিন দিন চলে গেল। আমাদের সাথে প্রাণ বাঁচানোর মতো খাবার নেই, ওই যৎ সামান্য খাবার ছাড়া; যা বেলাল বোগলের নিচে লুকিয়ে রেখেছিল’ (তিরমিজি শরিফ)।
রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে প্রস্তাব করা হয়েছিল, তুমি যদি চাও উহুদ পাহাড়কে স্বর্ণে পরিণত করে দেয়া হবে। রাসূল সা: বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমি এটা চাই না। আমি চাই একদিন আহার করব আর তোমার শোকর আদায় করব। আরেক দিন অভুক্ত থাকব আর সবর করব।’ রাসূলের দোয়া ছিল এরকম, ‘হে আল্লাহ! আমাকে গরিব অবস্থায় রাখ, গরিব অবস্থায়ই আমার মৃত্যু দান করো, গরিবদের সঙ্গেই আমার হাশর করো’ (ইবনে মাজাহ, তিরমিজি শরিফ)।
সবর ও শোকর এ দু’টি এমন মহৎ গুণ, যা মানুষকে সরাসরি জান্নাতে পৌঁছে দেয়। সবরের দ্বারা মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা হয়। যেকোনো বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করা মূলত আল্লাহ তায়ালার কাছে নিজেকে চরমভাবে সোপর্দ করার নির্দেশ করে। তাই সবরের সাওয়াব অনেক বেশি। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘সবরের প্রতিদান হলো জান্নাত’ (সহিহ ইবনে খুজাইমা)। আরেকটি হলো শোকর। শোকর আদায় করলে আল্লাহ তায়ালা নেয়ামত আরো বৃদ্ধি করে দেন। কুরআন কারিমে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যদি তোমরা আমার নেয়ামত পেয়ে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো, তাহলে নেয়ামত বৃদ্ধি করে দেবো। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও তা হলে নেয়ামত ছিনিয়ে নেবো’ (সূরা ইবরাহিম : ৭)।
শোকর আদায় করলে আল্লাহ তায়ালা বান্দাহর নেয়ামত বাড়িয়ে দেন। নেয়ামত বৃদ্ধির প্রক্রিয়া বিভিন্ন রূপ হতে পারে। কখনো নেয়ামতের পরিমাণ বাড়িয়ে দেন। কখনো নেয়ামতে বরকত দান করেন। যেমন সম্পদের পরিমাণ না বাড়িয়ে তাতে বরকত দান করে দেন। এ জন্যই অনেক দ্বীনদার শ্রেণীকে দেখা যায়, অল্প রোজগারে সুখ-শান্তি ও তৃপ্তির সাথে জীবনযাপন করছেন। তার মানে আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্পদে বরকত দান করেছেন। আবার অনেককে দেখা যায়, সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেও সুখ নেই। আজ এই বিপদ, কাল ওই বিপদ। টেনশনের পর টেনশন। বাজে খাতে তার সম্পদ উড়ে যাচ্ছে। এর মানে হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা সম্পদের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন তবে তাতে বরকত দেননি।
রাসূলুল্লাহ সা: জীবনযাত্রার যে মান ছিল, আমাদের জীবনযাত্রার মান তার চেয়ে বহু গুণে উন্নত। তিনি হয়তো একটা খেজুর খেয়ে দিন গুজরান করেছেন। কখনো না খেয়ে থেকেছেন। কখনো হয়তো ঘরে রুটি তৈরি হয়েছে তো তরকারি নেই। এই ছিল দোজাহানের বাদশাহর জীবনযাত্রার মান। তার পরও তিনি সবর ও শোকর আদায় করেছেন। আর আমরা কত উন্নত জীবন যাপন করি। আমাদের মধ্যে যারা দিনমজুর তারাও পেট ভরে তিন বেলা ভাত খায়। আর অনেকে তো দিনে কত বেলা খাই হিসাব নেই।
সাহাবায়ে কেরামের অবস্থা এই ছিল যে, যখন তাদের কাছে সম্পদ আসা শুরু হয়েছে তারা পেরেশান হয়ে যেতেন। না জানি ঈমান-আমলের বদলা দুনিয়াতে পেয়ে গেলাম নাকি? এ জন্যই হজরত আয়েশা রা:-এর জন্য যখন হজরত উমর রা. রাষ্ট্রীয় ভাতা চালু করে দিলেন, তখন তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমার কাছে দুনিয়া আসা শুরু করেছে। সুতরাং তুমি আমাকে তোমার কাছে উঠিয়ে নাও।’
সুতরাং অভাব-অনটনে ধৈর্য ধারণ করা ও সচ্ছলতায় শোকর আদায় করা রাসূলুল্লাহ সা: সুন্নত। আমাদের প্রত্যেকের জন্য এই সুন্নত পালন করা জরুরি।
লেখক : শিক্ষক, জামিয়া রহমানিয়া সওতুল হেরা, টঙ্গী, গাজীপুর