অনলাইন প্রতিবেদক: অর্ধযুগ পার করলো এটিএন নিউজ চ্যানেল। সংবাদভিত্তিক এই চ্যানেলটি তার সংবাদ প্রচারে নিজস্ব আঙ্গিক তৈরি করেছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এদেশের অগণিত তরুণকে যিনি স্বপ্ন দেখাতে শিখিয়েছেন,টিভি সাংবাদিকতায় নতুন প্রজন্মের কাছে যিনি আইকন হিসেবে পরিচিত, তিনি চ্যানেলটির বার্তা প্রধান মুন্নী সাহা। ইত্তেফাকের সাথে দীর্ঘ আড্ডা-আলাপে স্যাটেলাইট চ্যানেলের বর্তমান প্রেক্ষাপট,টিআরপি প্রসঙ্গ, সংবাদের গুণগত মান, কর্পোরেট দাসত্ব—এসব বিষয় নিয়েই কথা বলেছেন তিনি।
অর্ধযুগ পেরুনো এটিএন নিউজের মূল সাফল্য কোনটিকে বা কোনদিকটাকে বলবেন, যা বাংলাদেশের স্যাটেলাইট চ্যানেলে বিরল?
কি আছে এটিএন নিউজে যা অন্য কোথাও নেই—এ প্রশ্নের উত্তর আপনিও জানেন, আপনার মতো করে। কবিগুরুকে ধার করে যদি বলি তাহলে বলবো—আমার প্রাণের মাঝে সুধা আছে চাও কি, তাই বুঝি হায় খবর নিলে না… হা হা হা! নাহ, সংবাদের সাদামাটা ভাষায় বলি—সারল্য, সিম্পলিসিটি আছে। তাই আমরা ক্লেইম করি আমরা সাধারণের। আর অর্ধযুগ পার করে হিসেব করলে দেখবো, আমরা জড়ো করতে পেরেছি সাধারণের অসাধারণ গল্প।
আর দৃষ্টান্তের বিষয়টি বললে এভাবে বলবো—blessings in disguised! জানি, আমার বন্ধুরা যারা বড় বড় ইনভেস্টেমেন্ট-এর, হাইটেক টিভি চ্যানেলের বিশাল বিশাল স্টার তারা কপাল নিয়ে জন্মেছে, তারা চোখ তুলে প্যান করলে এরিয়ায় লাইট জ্বলে যায়! আর আমরা গায়ে গায়ে লেপ্টে বসেও জায়গা পাই না। প্লাস্টিকের ব্লাইন্ড কালার করে সেট বানাই, ঘর থেকে কার্পেট বা সাউন্ডবক্স বগলদাবা করি কাজটি করার জন্য। এতে এক ধরনের শিক্ষা, খাঁটি বাংলাদেশি কায়দায় অল্প খরচে টিভি বানানোর অভিজ্ঞতা। তবে এটাই আদর্শ নয়, যে বা যারা আমাদের এই টর্চারে ফেলেছে তারা সেটার জন্য হয়তো অনুতপ্ত নয়, তবে আমি বলি ‘নিয়ত’। আমি বা আমরা বিশ্বাস করে কাজ করছি। কাজ করতে করতে শিখছি, এটাই প্রাপ্তি। আর সাদামাটায়, সাধারণের আস্থা, আমরা সাধারণের অসাধারণ উদাহরণ। টিভির টেকনোলজি বা টিভির সামনের পেছনের মানুষ হিসেবেও!
সমপ্রতি টিআরপি নিয়ে আপনার বিশেষ অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী একটি চমত্কার মন্তব্য করেছেন, এ নিয়ে একটি নিষেধাজ্ঞাও এসেছে—আপনি কি মনে করেন এতেই কী মূল সঙ্কটের সমাধান হবে? অর্থাত্ টিআরপি’র কারণেই আমাদের অনুষ্ঠানের মান পড়ে যাচ্ছে। আমরা ভিনদেশি চ্যানেলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছি? এ থেকে ফেরানো যাবে—
টিআরপি! তথ্যমন্ত্রী তো বলেছেনই, তাই আমি আর না বলি! আমার অস্বস্তি দেখে বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই। বাচ্চার স্কুলের অন্যায়-অবিচার নিয়ে অভিভাবকরা যেমন জিম্মি তেমনি আমরাও। কি বলবো, আবার কি হবে, আমি ভাই একজন ছাপোষা রিপোর্টার, এসব বড় বড় ইস্যু নিয়ে বলবো, মালিক পক্ষ খেপবে, টিআরপিওয়ালাটা চ্যানেলটাকে পিষবে। এমনিতেই বেতন হয় না ঠিকমতো, আর এসব বলে-টলে আমাদের আর ক্ষতি করে কী লাভ বলুন! সোজা কথা—যে চ্যানেলের টাকা বেশি সেই চ্যানেলের টিআরপি বেশি, কেউ দেখুক আর না-ই দেখুক!
এছাড়া এখনকার ইউটিউবসহ বিভিন্ন ডিভাইসে দর্শক ভাগ হয়ে যাচ্ছেন। দর্শক টিভির এই বোকাবাক্স থেকে চোখ সরিয়ে অন্যান্য নানা উপাত্তে ব্যস্ত থাকছেন। এখন দর্শক কোনো এক্সক্লুসিভ বা ব্রেকিং নিউজ নিজেদের সুবিধাজনক সময়ে ইউটিউবে দেখে নিতে চান। নাটক–গানের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। সেক্ষেত্রে আগামী কয়েকবছরে টিভি বা স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একটা সঙ্কটের ভেতরে পড়বে কি–না! যেমন—গতবছর নিউইয়র্কের এবিসি চ্যানেলের ভাইস প্রেসিডেন্ট কার্ল টি নিলসনের ইন্টারভিউ যখন নিয়েছিলাম আমি তখন ঠিক একই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘আগামী ৫ বছরের ভেতরে টিভি বা নিউজ চ্যানেল শুধুমাত্র কনটেন্ট মেকার হিসেবে কাজ করবে।’
আপনার ভিশনটা শুনতে চাচ্ছি—
হ্যাঁ, আগামী পাঁচ বছর হয়তো ওদের লাগবে, আমাদের না! আমাদের টিভি সেক্টরটা পরের দিকে আর দাঁড়ানোর সুযোগই পেল না—মুক্ত বাজার মুক্ত আকাশ! কলকাতার অনেক বাংলা চ্যানেল টাকা গোনে, আমাদের চ্যানেল আই বা এটিএন বাংলা কখনো রুপি গুনতে পেরেছে কি-না সন্দেহ! ফলে, টিভি ভবনগুলো খুব শিগগিরই কন্টেন্ট বানানোর প্রোডাকশন হাউজে পরিণত হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
ব্রেকিং নিউজ নিয়ে বাংলাদেশের চ্যানেলগুলো অনেক সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এ বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন?দেখা যায়, প্রতিদিন হরহামেশা ব্রেকিং নিউজ থাকে। এতে কি ‘ব্রেকিং নিউজ’ শব্দটি তার যথার্থ মূল্য হারাচ্ছে না?
ব্রেকিং নিউজের কোমর ভেঙে গেছে। এটা ইন্ডিয়ান সোকল্ড কিছু চ্যানেলের প্রভাব। সারাক্ষণ গ্রাফিক্যাল নয়েজ আর কোথাও ১টা চায়ের কাপ ভাঙলে ব্রেকিং নিউজ! আমাদের মিশুক স্যার যখন ছিলেন তখন এই ব্রেকিং নিয়ে হাইপারদের বকা দিতেন। এখন স্রোতে গা ভাসানো, অন্যরা দিচ্ছে আর আমরা যতই ভালো সাংবাদিকতার উদাহরণ তৈরি করার জন্য দৌঁড়ে পেছনে থাকি না কেন সবাই ভুল বোঝে। ধরে নেন, আমরা অপারগ। ফলে, কি আর করা, গুরুত্বের বিচারে ব্রেকিং আর শুদ্ধ থাকছে না। সবকিছু গা সওয়া।
নিউজ চ্যানেলগুলোয় এদেশের সীমাবদ্ধতাগুলো কি কি? অন্য চ্যানেলগুলোর থেকে এর বাড়তি আকর্ষণ কি কি? বাংলাদেশে আজো কোনো নির্দিষ্ট জনরাভিত্তিক চ্যানেল কেন হয়ে উঠলো না। অর্থাত্ পূূর্ণাঙ্গ এন্টারটেইন বা তরুণদের চ্যানেল বা ছোটদের চ্যানেল বা খেলার চ্যানেল বা পরিবেশ প্রকৃতির চ্যানেল এগুলোর প্রয়োজন কি আপনি বোধ করেন। আপনার মূল্যায়ন কি?
শুধু নিউজ চ্যানেল কেন, সব চ্যানেল মিলেই বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হিউম্যান রিসোর্স। আমি বলি, মানুষের দেশে মানুষ নেই! এই বাক্যের দ্যোতনা আছে—একে তো human quality-র অভাব আমাদের সব চ্যানেলগুলোতে, আর অভাব যোগ্য tv human resources আমাদের এই ২৫টি টিভি চ্যানেলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যা লোকজন, বিশেষ করে কাজ জানা লোক আছে তা দিয়ে আড়াইটা টিভি চ্যানেল চালানো যায় সেখানে এসব হিউম্যান রিসোর্স ২৫টিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। ফলে বলতেই পারেন, আমরা অনেকেই টিভির কাজের জন্য যথার্থ যোগ্য নই। অনেকে আবার বলেন, মার্কেট ছোট, অনেকগুলো চ্যানেল ফলে ব্যবসাও একটা ইস্যু! হ্যাঁ—ইস্যু সেটা আমাদের মতো টানাটানির চ্যানেলে, অন্যদের না। তার চেয়ে বড় ইস্যু ‘আইডিয়া’, সবাই শুধু এর ওরটা কপি করে। সেক্ষেত্রে অনুষ্ঠানের মান কিভাবে উন্নত হবে। আর উন্নত হলেও দর্শকরা তো হাজারো অপশনে আছেন।
ফলে, চ্যালেঞ্জ একটা না। লোক কম, টাকা কম, অসম প্রতিযোগিতা গোটা বিশ্বের তাবত্ চ্যানেলগুলোর সাথে, আইডিয়ার অভাব, লোকজনের মধ্যে কাজ না শিখেই তারকা হওয়ার তাড়াহুড়ো, আর কোনো মালিকপক্ষের ইনটেনশন হলো কুকুর পোষার মতো মিডিয়া বা চ্যানেল পোষা। আর পুরো ব্যাপারটি মিলে ইন্ডাস্ট্রি অর্থাত্ সাংবাদিকতার নীতি-দ্বায়িত্বশীলতা, অনুষ্ঠানের মান থেকে শুরু করে সবখানে সব দেশে দেখা না যাওয়া, টিআরপি সব সবই। কিন্তু এখানে আমরা অর্থাত্ কর্মীরা নানাভাবে নানা দিকে জিম্মি। জনগণ বা দর্শকের ১০০ ভাগ মন জয় করতে না পারলে মালিকপক্ষ খুশি নয়। কাউকে স্বস্তি দিতে হলে অন্য কাউকে অস্বস্তির কারণ হিসেবে দেখাতে হয়। আপনাদের বা পাঠকদের ধারণা হয় অনেক সময় যে, সরকার বা প্রভাবশালীর চাপে সবাই সবটা বলতে বা দেখাতে পারে না। সত্যি বলতে কি, চাপে রাখার জন্য সরকার বা তথ্য মন্ত্রণালয় দরকার পড়ে না। লাইসেন্স পাওয়া থেকে ডিশ-এ চলা এবং টিআরপি সিন্ডিকেট বিজ্ঞাপনী সংস্থার হাতে নিয়ন্ত্রণ সবকিছুর মধ্যে এমন হযবরল সিস্টেম। তাতে শুধু দুয়েকটি চ্যানেল বা চ্যানেলের কর্মীরা টিকে থাকার কৌশল প্র্যাকটিস করতে পারে বা পারছেন। আমরা বাকিরা কেউ ধুঁকছি, কেউ ঠকছি। এ কারণেই টেলিভিশন নিয়ে অন্তত প্রফেশনালদের কোনো ‘ভিশন’ নেই। আমার জানা মতে, তৈরিও হচ্ছে না।
খুব স্বাভাবিক চোখে খবরের গভীরের খবর বা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে চ্যানেলগুলো সরে আসছে?খুব বেশি আলোচিত খবর আর পাওয়া যায় না, যা কোনো ঘটনা না, রিপোর্টারের আবিষ্কার।
অনুষ্ঠানের নকল প্রবণতা। আপনার দৃষ্টিতে এর ব্যাখ্যা কি? যদি আরো সহজ ভাবে বলি, দ্বিতীয় মুন্নি সাহা কিন্তু গত প্রায় দেড়যুগেও তৈরি হলো না। অথচ চ্যানেল বা প্রচারযন্ত্র বেড়েই চলেছে!
ডিমান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই থিউরিতে ফেলা যায় এ প্রশ্নের জবাব। দর্শক চায় না বলে দেয় না, আবার দেয় না বলে চায় না! আসলে আমাদের টিভি চ্যানেল বা খবর বা রিপোর্টিং এখন আর সেভাবে দেখে না। কয়টা দেখবে? কখন দেখবে? ২৭০০ পত্রিকা, কয়েক হাজার অনলাইন, আস্ত ২৭টি দেশি, আর অগুনতি বিদেশি চ্যানেল ভেসে বেড়ায় আকাশে বাতাসে। তারপরও ফেসবুক আছে না! অনেক থাকলে আসলে কিছুই থাকে না! ফাঁপা হালকার মধ্যে বসবাস। ফলে ইনডেপথ রিপোর্টিং যেমন নেই, ইনডেপথ সমাজ, বন্ধন, সম্পর্কও নেই। এটা সময়ের সাথে, সময়ের বাস্তবতায় চলছে। কাকে দোষ দেবো? আমরা খেটেখুটে পুরোটিম শুক্রবারের জন্য বিশেষ রিপোর্ট বানাই, দাবি করতে পারি অন্য কোনো টিভিতে সেটা পাবেন না। গত ৬ বছর রেগুলার করছি! কিন্তু অনেকেই দেখেন না! দাদাগিরি বা চটুল মীরাক্কল রেখে কে ‘এপিএস নাম’ অর্থাত্ মন্ত্রীর পিএস-এপিএসদের দুর্নীতি, চুরি আর দাপটের কাহিনি দেখতে যাবে? আর এসব কাজ আমরা খেটেখুটে করছি অনদিকে অন্য কোনো নিউজ চ্যানেল চাঞ্চল্য আর লাইভের নামে আলুপটলের দাম দেখাচ্ছে। দর্শক বোকা হতে ভালোবাসেন তাই লাইভ বা টেকনোলজির গিমিকে নিজেদের স্মার্ট ভাবে ওইসব দেখে। ফলে, কস্মিন দেশে যদাচার! আর মুন্নী সাহা হয়নি কেন? এখন তো চালাকের যুগ, ডিজিটাল যুগ, শর্টকাট যুগ। আরেকটা মুন্নী সাহা মানে, আরেকটা বোকা, অনুপযুক্ত, অচল মানুষ! ভাগ্যিস এ প্রজন্ম শুরু থেকেই হিসেবি, বৈষয়িক ও অমানবিক! তা না হলে তো বিপদ হতো!
এবারে খানিক ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি। কি কারণে মুন্নী সাহার রিপোর্ট বিশেষ। এর রহস্য কি? কোনো বিশেষ প্রস্তুতি বা কোনো টিপস যদি থাকে?
মুন্নী সাহার রিপোর্ট বিশেষ? হুম! মানছি যখন রেগুলার রিপোর্ট করতাম তখন একটু চেষ্টা করতাম আলাদা করে ভাবতে। এই ভিন্নতা সৃষ্টির চোখ, ভাবনা বা আর্ট শিখিয়েছেন মিশুক মুনীর। আমি একটু ভিন্নরকম মানুষও—স্যার বলতেন! হয়তো তাই এ কারনেই ভিন্ন। টিপস কিছু নেই। আমার কাজটা আমারই আয়না। অনেক সময় আমাকে ছেলেমেয়েরা জিজ্ঞেস করে—আপু ভালো রিপোর্টার কিভাবে হওয়া যায়? আমি বলি, আগে তো ভালো মানুষ, তারপর ভালো রিপোর্টার!
আলোচনার পিঠে সমালোচনাও থাকে অনেক। মুন্নী সাহার খবরগুলো নিয়ে হঠাত্ করেই গোটা দেশ বা বিশ্ববাঙালিরা সামাজিক মাধ্যমগুলোতে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। তখন নিজেকে কিভাবে জাস্টিফাই করেন। নাকি তোয়াক্কায় করেন না এগুলোর। সর্বশেষ মুস্তাফিজের রিপোর্টটা নিয়েও একই ঘটনার তোলপাড় আমরা দেখলাম—
হ্যাঁ, নাম বা আলোচনা যা হয়েছে বা হয় তা সমালোচনার জন্য। আমি ধন্য, আমাকে পছন্দ করা মানুষের চেয়ে অপছন্দ করা মানুষ বেশি। আমি এতে আনন্দিত। ঠিক উল্টোটা হলে অর্থাত্ আমার কাজ পছন্দ করে, ভালোবাসে, উন্নতি চায়, এগিয়ে যাওয়ার সাহস জোগায়, কখনো কখনো হাত বাড়িয়ে দেয় সে সব মানুষের সংখ্যা বেশি হলে তো কনফ্লিক্ট হতো। সমমেরুতে বিকর্ষণ—কথায় আছে না। আমি এভাবে বলি, অনুদার কুিসত, নির্মম, লোভী, হিংসুক, কুশিক্ষিতদের একটি স্ট্রং ‘লবি’ আছে বলে আমি আছি। কারণ ভালোরা ভালোটা বলে কম। ফলে, নিরামিশ জীবন—ভাবা যায়? আর মুস্তাফিজের সাক্ষাত্কারটি নিয়ে যা হয়েছে সেটা আমি অর্থাত্ মুন্নী সাহা নামটি না হলে হয়তো হতো না। কেউ দেখতোও না। এই ক্রিকেটারের ক্রিকেট নিয়ে বলা মানা, আইপিএল বা নিজের দেশের ক্রিকেট, ক্রিকেটার নিয়ে মন্তব্যেও নিষেধাজ্ঞা। তো ওকে, কবুতর পোষার গল্প জিজ্ঞেস করবো না তো কি করবো? আর আপনি-তুমি নিয়ে অনেকে আপত্তি তুলেছেন। মুস্তাফিজ সবার আদর করা একটা ক্যারেক্টার, ওকে কাছে পেলে যে কেউই স্নেহ, আদর, ভালোবাসা দেবে। ‘তুমি’তে সেটা আছে। তবে এ দফায় স্বার্থকতা এটাই যে, তাবত্ তারকারাও সমালোচনা করেছেন অর্থাত্ তারা বাংলাদেশের বা কারওয়ান বাজারের এই বাজারি, ঘামের গন্ধের টিভিটাও দেখেন!
খবরের জনপ্রিয়তা বনাম খবরের উত্কর্ষতা পরস্পর বিপরীতমুখি। এই বাণিজ্যের নিউজ চ্যানেলে এই দুইয়ের সম্মিলন গত ৬ বছরে কিভাবে সামলিয়েছেন। বিপণন বিভাগটিও বা কতটা সহায়ক ছিল। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো তো সেলেবল ফিগার চায়, গ্ল্যামারের পেছনে লক্ষ কোটি টাকা লগ্নি করে, সেক্ষেত্রে নিউজের গ্রামার প্রচলিত গ্লামারের সাথে কিভাবে লড়াই করে। দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতায় এর জবাব কি দেবেন?
৬ বছরে এটিএন নিউজ, আপনি নিশ্চই আমাদের সেলিব্রেশনটা অর্থাত্ পালন করাটা দেখেছেন। কেক কেটে, হাজার হাজার মানুষ জড়ো করে চ্যানেলের বার্ষিকী পালনের সামর্থ্য ও রুচি আমাদের নেই। আমরা ফিরে দেখেছি কি করেছি, মাথায় রাখতে চাই কি করবো। সেটাই আমাদের ‘সাধারণের অসাধারণ গল্প’। এর দুটো মানে। চ্যানেল হিসেবে আমরাই দাবি করতে পারি যে, আমরা যা কনটেন্ট প্ল্যান করি সেটা এক্কেবারে সাধারণের সাধারণ, সহজিয়া মানুষের জন্য। আমরা কানেক্টিং বাংলাদেশ। আমাদের টিভি চ্যানেলেই যেকোনো মানুষ সহজে হাজির হয় খবর বা নালিশ নিয়ে। অন্যরা টিটকারি করে বলে ঘামের গন্ধের টিভি। আমরা গর্বের সাথে দাবি করি হ্যাঁ, আমরা ঘামের গন্ধের। আর দ্বিতীয় অসাধারণত্ব হলো—আমাদের টিম! আমাদের বসার জায়গা নেই, বেতন গড়ায় দু-মাস অন্তর, অন্য সব টিভি তো বটেই, পত্রিকার চেয়েও আমাদের বেতন-ভাতা সুবিধা কম, আমরা যন্ত্রপাতিহীন যন্ত্রণায় থাকি সারাক্ষণ, আমরা ক্যাবল অপারেটরদের মাধ্যমেও পৌঁছাতে পারি না টাকার অভাবে। কিন্তু সারাক্ষণ কী টান টান প্রাণ। কী দারুণ সৃষ্টির নেশা, যন্ত্র, টাকা, ঈর্ষা, বৈরিতা সবকিছুকেই আমরা মোকাবেলা করছি ভালোবাসায়। পুরো টিম, যারা শুধু স্বাধীনতায় কাজ করতে ভালোবাসে, কাজই প্রার্থনা। এভাবেই রচিত হয় ঘামের গন্ধের টিভির অসাধারণ গল্প।
কৃতজ্ঞতায়: ইত্তেফাক