সারাদেশে ধর্মীয় মর্যাদা, ভাবগম্ভীর পরিবেশ ও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপিত হয়েছে।
আজ বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর জন্ম ও ওফাত দিবস।
মুসলিম উম্মাহ দিবসটি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) হিসেবে উদযাপন করে। বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়সহ শান্তিকামী প্রত্যেক মানুষের কাছে দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
সমগ্র মুসলিম উম্মাহ’র সাথে বাংলাদেশের মুসলমানরাও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করছে। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- মহানবী (সা.)-এর পূর্ণাঙ্গ জীবন নিয়ে আলোচনা, ধর্মীয় শোভাযাত্রা, সেমিনার, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর তাৎপর্য তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ এ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।
ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সরকারি ছুটি।
বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক এ উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও বেসরকারি রেডিও দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করছে।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন সোমবার থেকে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। এ অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ওয়াজ মাহফিল, সেমিনার, ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি ও মহানবী (সা.) জীবনভিত্তিক পোস্টার ও গ্রন্থ প্রদর্শনী, ইসলামী বইমেলা, ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, কিরাত ও হামদ-না’ত এবং রাসূল (সা.) শানে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর রয়েছে।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পূর্ব চত্বরে গতকাল সোমবার বাদ আসর ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ঈদে মিলাদুন্নবীর অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন।
আজ বাদ আছর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে, বায়তুল মোকাররম সম্মেলন কক্ষে মহানবীর জীবন ও কর্ম নিয়ে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররমের পূর্ব চত্বরে ওয়াজ মাহফিল ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) উপলক্ষে গতকাল ১২ ডিসেম্বর থেকে আগামী ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব চত্বরে ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে আজ বাদ মাগরেব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ধানমন্ডি-৩ নম্বরে সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন আজ রাজধানীতে ধর্মীয় শোভাযাত্রা বের করে। এবার নগরীর বিভিন্ন মহল্লায়ও ধর্মীয় শোভাযাত্রা লক্ষ্য করা গেছে।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জশনে জুলুস ও আন্তর্জাতিক শান্তি মহাসমাবেশের আয়োজন করে আন্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভান্ডারীয়া। এতে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বক্তৃতা করেন।
আশেকান মাইজভান্ডারী এসোসিয়েশনের উদ্যোগে শাহজাহানপুর রেলওয়ে ময়দানে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও মাইজভান্ডার দরবার শরীফের গদিনশীন পীর হযরত মাওলানা ছৈয়দ মুজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বক্তৃতা করেন।
আলোচনা সভা শেষে শাহজাহানপুর রেলওয়ে মাঠ থেকে সৈয়দ মুজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর নেতৃত্বে ঈদে মিলাদুন্নবীর শোভাযাত্রা বের করা হয়। মাইজভান্ডারীর হাজার হাজার অনুসারী এতে শরীক হন। শোভাযাত্রাটি শহীদবাগ, রাজারবাগ ও পীরজঙ্গি মাজার হয়ে আবার শাহজাহানপুর মাঠে গিয়ে শেষ হয়।
আশেকানে গাউছিয়া রহমানিয়া মইনিয়া সহিদীয়া মাইজভান্ডারীয়া পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) উপলক্ষে গুলিস্তান কাজী বশির মিলনায়তনে জশ্নে জুলুশের আয়োজন করে। এতে এলজিআরডি ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মোঃ মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ বক্তৃতা করেন।
মর্যাদাপূর্ণ দিবসটি উদযাপনে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী নিজস্ব মিলনায়তনে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। এতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক সচিব নাছিমা বেগম প্রধান অতিথি ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর পরিচালক আনজীর লিটন। অনুষ্ঠানে শিশু ও শিশুদের অভিভাবকসহ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।
বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রাজধানীর মতিঝিলস্থ বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) উপলক্ষে আশেকে রাসূল (সঃ) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত লাখ লাখ আশেকে রাসূল ও মুক্তিকামী মানুষ যোগদান করেন।
সকাল সাড়ে ১১টায় ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) উপলক্ষে দেওয়ানবাগ শরীফের গদিনশীন হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) আশেকে রাসূলদের নিয়ে এক বিশাল কেক কাটেন। বাদ যোহর হযরত দেওয়ানবাগী সমাপনী বক্তৃতা করে সম্মেলনের আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।